বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ টেস্ট: অপেক্ষা বাড়ল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের

March 30, 2020 | 11:32 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতিতে ব্যবহারের জন্য সোমবার (৩০ মার্চ) লন্ডন থেকে যে রিএজেন্টগুলো আসার কথা ছিল, সেগুলো আসেনি। সারাবিশ্বের বিমান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ায় বারবার তারিখ পরিবর্তনের পরও রিএজেন্টগুলো হাতে পাচ্ছেন না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। ফলে তাদের অপেক্ষার পালা বেড়েই চলেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বাংলাদেশ ওষুধ প্রশসানের কাছ থেকে গত ১৮ মার্চ রিএজেন্ট আমদানির অনুমোদন পাওয়ার পরই ইংল্যান্ডের দ্য ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির কাছ ১০ ধরনের ১০০ কেজি রিএজেন্ট আমাদানির জন্য এলসি খোলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। দ্রুততার সঙ্গে রিএজেন্টগুলো সরবরাহের জন্য ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানিকে তাগিদ দেয় তারা।

বিষয়টি গুরুত্ব উপলব্ধি করে ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন ২৫ মার্চের মধ্যে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রথম দফায় একবার তারিখ পরিবর্তন করে ইংল্যান্ডের কোম্পানিটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তারা জানায়, ৩০ মার্চের মধ্যেই রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেবে তারা। কার্গো বিমানে আকাশপথে আসবে রিএজেন্টগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সোমবারের মধ্যে (৩০ মার্চ) রিএজেন্টগুলো হাতে পাওয়া যাবে— এমন হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পুরো প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের বাজারে থাকা প্রোডাক্টগুলো সংগ্রহের জন্য হোম কোয়ারেনটাইনে যাওয়া ব্যবসায়ীদের বাসা থেকে বের করে আনেন।

বিজ্ঞাপন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে কর্মরত এক্সপার্ট, সাধারণ কর্মী— সবার ছুটি বাতিল করে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে দিন রাত চলে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির ফর্মুলা আপডেটের কাজ। আর অভিভাবক হিসেবে সবাইকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

কিন্তু সোমবার (৩০ মার্চ) বিকেলে ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির কাছ থেকে খবর আসে, আকাশপথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় রিএজেন্টগুলো তারা পাঠাতে পারেনি। তারা চেষ্টা করছে, যেকোনো উপায়ে দ্রুত রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছাতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানি চেষ্টা করছে নিয়মিত কার্গো বিমানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রিএজেন্টগুলো পাঠাতে। সেটি যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আগামী ৬ এপ্রিল বিশ্বভিত্তিক ডাক পরিষেবা ‘ফেডেক্স এক্সপ্রেস’-এর প্রাইভেট কার্গো বিমানে করে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পাঠাবে ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানি। সেক্ষেত্রে পরিবহন খরচ বাবদ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কিছু বাড়তি টাকা গুণতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সোমবারও (৩০ মার্চ) আমরা রিএজেন্টগুলো হাতে পাইনি। ওরা (ইংল্যান্ডের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান) আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আগামী ৬ তারিখের মধ্যে পাঠিয়ে দেবে। নিয়মিত কার্গো বিমানে যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ফেডেক্সের প্রাইভেট বিমানে পাঠাবে।’

এদিকে রিএজেন্ট হাতে না আসায় কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পদ্ধতির সুফল মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে হতাশ প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা। তারা চেয়েছিলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার আগেই মাসে অন্তত ১ লাখ লোককে কোভিড-১৯ টেস্ট করাবেন তারা। কারণ, রোগ শনাক্ত হলে সেটি বিস্তার রোধ সহজ হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘রিএজেন্টের কারণে আমরা অন্তত দুই সপ্তাহ পিছিয়ে গেলাম। আমাদের হাতে রিএজেন্টগুলো কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে পৌঁছালে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের লক্ষ্য মাসে অন্তত এক লাখ লোককে এই পদ্ধতিতে টেস্ট করা। আমরা এখন অপেক্ষা করছি রিএজেন্টগুলোর জন্য।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট ‘কেভিড-১৯’ নামক মরণঘাতী রোগ নিয়ে গোটাবিশ্ব যখন দিশেহারা, ঠিক তখন একটি ‘ভালো খবর’ দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা জানান, সহজ পদ্ধতি ও সুলভ মুল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তারা। যে পদ্ধতিতে প্রতি মাসে অন্তত এক লাখ লোকের কোভিড-১৯ টেস্ট করা যাবে। সেই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য যে কেমিক্যালগুলো প্রয়োজন ছিল, সেগুলো আমদানির অনুমতিও তারা পায় ‍ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছ থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শেষ পর্যন্ত সেই রিএজেন্টগুলো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের হাতে এসে পৌঁছাতে পারছে না।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

‘নিউ ইয়র্ক সায়েন্স জার্নালে’ গণস্বাস্থ্যের কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি

স্যাম্পলসহ পুরো টিম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চাই: ড. বিজন

‘গণস্বাস্থ্যের পদ্ধতিতে’ আগামী এক মাসে ১ লাখ লোকের করোনা টেস্ট!

প্রধানমন্ত্রীর ডাক পেলেন কোভিড-১৯’র টেস্ট উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন