বিজ্ঞাপন

অব্যবস্থাপনা-অনিয়মে ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম

September 11, 2020 | 8:15 am

এমদাদুল ইসলাম ভূট্টো, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ঠাকুরগাঁও: অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের মধ্যে চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। জেলা কার্যালয়সহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোর কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই নিম্নমুখী হচ্ছে সেবার মান। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মা, শিশুসহ স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা রেখে জনগণকে সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র সরেজমিনে দেখা যায় ৩টার পরিবর্তে অফিস বন্ধ হয়েছে দুপুর ১২টায়। আবার কোথাও ৯টায় অফিস না খুলে খুলছে ১০-১১টায়।

আবার কোথাও দেখে মনে হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, যেন মোটরসাইকেল গ্যারেজ। পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের মাঠে থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ কর্মীকেই মাঠে পাওয়া যায়নি। এই চিত্র শুধু ইউনিয়ন পর্যায়ে নয়, জেলা পর্যায়েও। জেলা কার্যালয়ে কয়েকদিন গিয়েও পাওয়া যায়নি হিসাব বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে।

বিজ্ঞাপন

জেলা কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, ‘জেলা অফিসে জনবলের সংখ্যা ১৯ জন, তবে উপস্থিত থাকেন মাত্র ৭-৮ জন। আবার হিসাব বিভাগের লোকজন মন চাইলে আসেন, না চাইলে আসেন না। যখন বেতন-ভাতা নিতে হয় তখন তারা আসেন।’

নারগুন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নূরে আক্তার বানু দুপুর ১২টায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে বাড়িতে চলে যাচ্ছিলেন। সময়ের আগেই কেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিসে কেউ নাই। রোগীও আসে না, এই জায়গায় একা থাকতে ভয় লাগে।’

হাজিরা খাতাতেও স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি নারগুন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক শামীমের। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।  তবে এফডাব্লিউএ সুলতানা বেগম মোবাইলে জানান, তিনি ব্যক্তিগত কাজে শহরে গেছেন। কথা বলে জানা যায়, অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।

বিজ্ঞাপন

শিবগঞ্জ (জামালপুর) উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের প্রহরীর কাছে অফিস দেরিতে খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো রাতেও ডিউটি করি, সেজন্য খুলতে দেরি হলো।’

নারগুন গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, ‘আগে পরিবার পরিকল্পনা থেকে মহিলা কর্মী আসত, এখন কেউই আসেন না। ফলে অনেক মা বিভিন্নরকম সমস্যায় ভুগছেন এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ একই কথা জানান জামালপুর ইউনিয়নের পারপুগী গ্রামের রাহেলা বেগম ও ভগতগাজী গ্রামের রেনুবালা।

চরঙ্গী এলাকার আনোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার নাই, ওষুধ পাওয়া যায় না। এদের কোনো টাইমটেবিল নাই। সময়মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলে না, রোগীও আর আগের মতো আসে না।’

বিষয়গুলো নিয়ে জানতে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হারুন অর রশীদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষণে আছি।’ সালন্দর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক জীবন দেবনাথও একই জবাব দেন এই প্রতিবেদককে।

বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক দেওয়ান মোর্শেদ কামাল কামাল বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনার জন্ম হয়েছে জনসংখ্যা সীমিত রাখার জন্য। মানুষের চাহিদার সাথে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া আমাদের কর্মী সংকটও প্রকট। যে কারণে কার্যক্রমে কিছুটা ব্যঘাত ঘটছে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন