বিজ্ঞাপন

‘গৃহঅন্তরীণ থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই এক নম্বর কাজ’

September 15, 2020 | 10:30 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘গৃহঅন্তরীণ’ থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই এক নম্বর কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যা মনে হয়, বড় একটা সংকট তৈরি হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই যে গৃহঅন্তরীণ হয়ে থাকায়। তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী, দীর্ঘকাল তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে বের করে আনাটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এটা এক নম্বর কাজ।’

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনআরসি) এ আলোচনা আয়োজন করে।

এর আগে মঙ্গলবার সরকারের নির্বাহী আদেশে আরও ছয় মাস খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ফলে আগামী মার্চ পর্যন্ত নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারবেন খালেদা জিয়া। তবে সাজা স্থগিত নয়, তাকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করাকেই প্রধান কাজ মনে করছেন মির্জা ফখরুল। পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা দলের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা ‘মিথ্যা মামলা’ দূর করাকে দ্বিতীয় কাজ বলে মনে করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

‘দুই নম্বর হচ্ছে— আমাদের যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি বিদেশে আছেন, তার বাংলাদেশে ফিরে আসা গণতন্ত্রের জন্যে বেশি প্রয়োজন এবং লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা, সেগুলোকে দূর করা,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘মূল বিষয়টা হচ্ছে— গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। শুধু মাত্র রাজনৈতিক দলগুলো নয়, জনগণের মধ্যেও সেই ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের মানুষ সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে। তারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছে, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়েছে, তারা নিজেদের ভাষার অধিকার ফিরিয়ে আনতে জয়ী হয়েছে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে জয়ী হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো গণতন্ত্রের এই যে সংগ্রাম, সমাজকে মুক্ত করবার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামেও তারা জয়ী হবে যদি ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন তৈরি করা যায়। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সেই গণআন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হব।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে কী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, কী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, কী সামাজিক ক্ষেত্রে এটা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে বৈষ্যম, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটের অধিকার হরণ, সংবাদপত্র-মত-ব্যক্তির স্বাধীনতা সবকিছু হরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জনগণ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না, এ দেশ এখন আওয়ামী লীগ ও তার ‍সুবিধাভোগী শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই সরকারের গণতন্ত্রের সবকিছুকে হরণ করেছে।’

বিজ্ঞাপন

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজকে কোনো কিছুই নেই। মানুষের যে মৌলিক অধিকার, তাকে তারা (আওয়ামী লীগ) নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অনির্দিষ্টাকালের জন্য ক্ষমতায় থাকতে তারা ২০১১ সালে সংবিধানে সংশোধনীর যে পাস করছে, তার চতুর্থ সংশোধনীর চেয়েও খারাপ।’

তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াকে মুক্ত করলে গণতন্ত্রের মুক্তি আসবে। কিন্তু সেটা করতে হলে আমাদের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কী করে আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামতে পারব, আন্দোলন করতে পারব— সেই কৌশল বের করতে হবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকে সংকটাপন্ন করে ফেলেছে। সবকিছু কর্তৃত্ববাদী, একজনের হাতে, একটা গোষ্ঠীর হাতে। রাষ্ট্র, প্রশাসন, সংসদ, নির্বাচন কমিশন, সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ— সমস্ত কিছু। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রেখেছে অনিয়ম-অবিচারের বিস্তার হচ্ছে। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে তারা রাষ্ট্রকে বিপদজনক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে অণুবীক্ষণ কিংবা দূরবীক্ষণ— কোনো যন্ত্র দিয়েই গণতন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গণতন্ত্র তো দূরের কথা, ভোটের নিশ্চয়তাই নেই। পরিকল্পনা এখন যা হয়, পরিকল্পনা পরীর মতো উড়াল দিয়ে একদল লোক অর্থ সম্পদ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় পাড়ি দিচ্ছে, আর জনগণ কল্পনার ধুলাবালিতে হামাগুড়ি খাচ্ছে। ব্যাংক, শেয়ারবাজার, জমি, নদী, বন, পাহাড়— সব ক্ষেত্রে দখল আর লুটপাট চলছে। আমলাতন্ত্র কামলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ আইন ভঙ্গকারী বাহিনীর খেতাব লাভ করেছে।’

বিএনআরসি‘র পরিচালক জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন