বিজ্ঞাপন

১৫ কোটি টাকা বিক্রির তথ্য লুকিয়েছে গ্রেট কাবাব ফ্যাকটরি

October 1, 2020 | 7:58 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তিনটি রেস্টুরেন্টে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করেছে দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাকটরি। এর মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে এসআর গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে ভ্যাট আইনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। এর আগে এই এসআর গ্রুপেরই দুই হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট ফুড ভিলেজ ও ফুড ভিলেজ প্লাসের ২০০ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপনের প্রমাণ পেয়েছিল ভ্যাট গোয়েন্দা।

কাবাব ফ্যাকটরির ভ্যাট ফাঁকির তথ্য তুলে ধরে ড. মইনুল বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকার দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাকটরির তিনটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, তারা ১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিক্রির তথ্য গোপন রেখেছিল। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এসআর গ্রুপের দ্য গ্রেট কাবাব ফ্যাকটরির তিনটি রেস্টুরেন্ট রাজধানীর গুলশান-২, যমুনা ফিউচার পার্ক ও ধানমন্ডিতে অবস্থিত। প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুযায়ী, এসআর গ্রুপের নিকুঞ্জ-১, ঢাকার অফিস থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই তিনটি রেস্টুরেন্টের প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ২০ কোটি ৫৩ লাখ ২৮ হাজার ২৩৭ টাকা। কিন্তু তারা যে কাগজপত্র দাখিল করেছে, তাদের ৫ কোটি ৭১ লাখ ৮৪ হাজার ২ টাকার পণ্য ও সেবা বিক্রি দেখানো হয়েছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার ২৩৫ টাকা বিক্রির তথ্য গোপন করেছে।

বিজ্ঞাপন

তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া যায়, দাখিল করা নথি অনুযায়ী তারা মোট ৭৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৫ টাকা ভ্যাট বা মূসক পরিশোধ করেছে। এতে করে তারা ২ কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪৩ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। আইন অনুযায়ী সময়মতো সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় মাসিক ২ শতাংশ হারে মোট আরোপিত সুদ ৮০ লাখ ২৯ হাজার ৩৬৯ টাকা। অনুসন্ধানে মোট মূসক ও সুদের পরিমাণ দাড়িয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ৮৪ হাজার ৩১১ টাকা।

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, গ্রেট কাবাব ফ্যাকটরি গুলশান-২ শাখায় ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৩ টাকার পণ্য ও সেবা বিক্রি দেখানো হয়। এর বিপরীতে ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৮ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়। কিন্তু জব্দ করা নথি অনুযায়ী তিন বছরে এই শাখায় প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ৯ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। এতে করে ১ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর জন্য মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৪ টাকা। সব মিলিয়ে ভ্যাট ও সুদসহ এই শাখার রাজস্ব পাওনা ১ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার ৩৬৮ টাকা।

গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি যমুনা ফিউচার পার্ক শাখায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ কোটি ৭০ লাখ ৮২ হাজার ১১৯ টাকা বিক্রি দেখানো হয়। এর বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করা হয় ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৯৫৭ টাকা। তবে জব্দ করা নথি অনুযায়ী এই শাখার প্রকৃত বিক্রি ১০ কোটি ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৫ টাকা। তাতে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। এর বিপরীতে মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদের পরিমাণ ৪৫ লাখ ৯ হাজার ১০৭ টাকা। সব মিলিয়ে এই শাখার ভ্যাট ও সুদসহ মোট রাজস্ব পাওনা ১ কোটি ৪২ লাখ ৪ হাজার ৬৮৬ টাকা।

বিজ্ঞাপন

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় শাখার ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯০ টাকার বিক্রি দেখানো হয়। এর বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করা হয় ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৬৮ টাকা। তবে উদ্ধার করা নথিপত্র অনুযায়ী এই শাখার প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার  ৩২৭ টাকা। এতে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয় ৮ লাখ ৭ হাজার ৫৭৯ টাকা। ২ শতাংশ হারে এর জন্য সুদ ৬৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। সব মিলিয়ে ধানমন্ডির এই শাখায় রাজস্ব পাওনা ৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৭ টাকা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মাইনুল বলেন, রেস্টুরেন্টটির তিন শাখায় প্রায় তিন কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি রয়েছে। তিনটি রেস্টুরেন্টের নামেই ভ্যাট আইনে আলাদা আলাদা মামলা করা হয়েছে।

এর আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ এলাকার লেকড্রাইভে এসআর গ্রুপের করপোরেট অফিসে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা। অভিযানে এসআর গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক গোপন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। তা থেকেই জানা যায়, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ফুড ভিলেজ ও ফুড ভিলেজ প্লাস নামের দুইটি প্রতিষ্ঠানের ২০০ কোটি টাকার বিক্রির হিসাব গোপন করেছে এসআর গ্রুপ। ওই দুইটি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন