বিজ্ঞাপন

বেবিচককে ‘বুড়ো আঙুল’, করোনা পজিটিভ যাত্রীও আসছে দেশে

December 26, 2020 | 8:22 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলেও জীবিকা ও অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আকাশপথে যোগাযোগ চালু রয়েছে প্রায় সব দেশেই। তবে অন্যান্য দেশের মতো এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও কঠোর নির্দেশনা রয়েছে— ‘করোনাভাইরাস নেগেটিভ’ সনদ না থাকলে কোনো যাত্রী কোনোভাবেই দেশে আসতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কঠোর নির্দেশনা— করোনা সনদ না থাকলে কোনো যাত্রীই দেশে ঢুকতে পাবেন না। কাগজে-কলমে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না খুব একটা। এয়ারলাইন্সগুলোর যাত্রী হয়ে এমন অনেকেই দেশে আসছেন, যাদের কাছে নেই করোনা সনদ। শুধু তাই নয়, করোনা পজিটিভ— এমন যাত্রীও এসেছেন দেশে।

বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত মাসখানেক সময়ে এমন যাত্রীদের বহন করে আনার জন্য জরিমানার মুখোমুখি হয়েছে বেশকিছু দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। আর বেবিচক বলছে, তারা দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিচেনায় এ বিষয়ে আরও কঠোর হবে। বেবিচক বলছে, করোনা পজিটিভ যাত্রী দেশে আনতেই থাকলে প্রয়োজনে একদিন থেকে শুরু করে একমাস পর্যন্ত এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে তারা।

বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ জনেরও বেশি করোনা পজিটিভ যাত্রী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে নানাবিধ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও চলতি ডিসেম্বরেই করোনা পজিটিভ বেশ কয়েকজন যাত্রী এসেছেন দেশে। আর করোনা সনদ ছাড়া কত যাত্রী এসেছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।

গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) করোনা পজিটিভ একজন যাত্রী ঢাকায় এসেছেন কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর৪১৯ ফ্লাইটে। অবতরণের পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত করেন বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যকর্মীরা। জানা গেছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে সঙ্গে সঙ্গে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় কাতার এয়ারওয়েজকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই যাত্রীকেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলে লিবিয়া থেকে ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট। ওই ফ্লাইটের সব যাত্রীর করোনা সনদ না থাকায় এয়ারলাইন্সটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমান করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ যাত্রী আনায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজকে। একইসঙ্গে ওই যাত্রীকেও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গত ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বরও সৌদি এয়ারলাইন্সে করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আসে বাংলাদেশে। এ কারণে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এয়ারলাইন্সটিকে। এর আগের দিন ১৩ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ যাত্রী আনায় এয়ারএশিয়াকে একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই দিনই করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় রাষ্টায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশকে। এরও আগে, গত ১০ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় মালদ্বীপ এয়ারলাইন্সকে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেস্কের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, এমন ভুল একবার হলে পুরো জাতির জন্য সেটা হুমকি। আমরা এয়ারলাইন্সগুলোকে বারবার চিটি দিয়েছি, অনুরোধ করেছি যেন করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী তারা না আনে। কিন্তু এরপরও তারা ভুল করছে— এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক। কোনো যাত্রী কোনোভাবেই আমাদের নজরের বাইরে যেতে পারবে না। আর যেসব এয়ারলাইন্স ভুল করছে, সামনে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আরও বড় কঠোর হতে বাধ্য হবে।

বিজ্ঞাপন

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনা কঠোর থেকে কঠোরতর হয়ে গেছে। প্রথমে করোনা পজিটিভ যাত্রী আনলে এয়ারলাইন্সকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হতো। পরে সেই জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার একজন করোনা পজিটিভি যাত্রী আনায় কাতার এয়ারওয়েজকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোনো এয়ারলাইন্স ভুল করলে তার জন্য কড়া মাশুল দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সিভিল এভিয়েশন থেকে সবাইকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা সামনে এমন কাজ করবে, তাদের এক থেকে একাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হবে। আমরা বিষয়টি আরও কঠোরভাবে পালন এবং ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনকে চিঠি দেবো। তাতেও কাজ না হলে সামনে আরও বেশি কঠোর হতে হবে।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল অ্যাভিয়েশন) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা কঠোর হয়েছি। সামনে আরও কঠোর হব। যারা এমন জঘন্য কাজ করেছে, তাদের অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। এরপরও যদি এমন ভুল কেউ করতে থাকে, তাদের ফ্লাইট বন্ধ করা হবে। একবার করলে একদিন, দ্বিতীয়বার সেই ভুল করলে দুই দিন এবং তৃতীয় বার করলে একসপ্তাহের জন্য ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপরও যদি কোনো এয়ারলাইন্স সেই ভুল করে, একমাসের জন্য আমরা তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে দেবো।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এটা যদি আমার বাংলাদেশ বিমানও করে, আমি তাদেরও ফ্লাইট বন্ধ করে দেবো। পুরো দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি এর সঙ্গে যুক্ত। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বিজ্ঞাপন

ফাইল ছবি

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন