বিজ্ঞাপন

বিধিনিষেধ মানতে সবখানেই অনীহা, ‘লকডাউন’ দেখতেও বের হন অনেকেই

April 5, 2021 | 11:28 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

একবছর আগের কথা। দেশে প্রথমবার করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ১৯তম দিন থেকে শুরু হয়েছিল সরকারঘোষিত প্রথম দিনের সাধারণ ছুটি। দিনটি ছিল ২৬ মার্চ। পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় সাধারণ ছুটি বাড়লেও প্রথম দফায় এই সাধারণ ছুটির শেষ দিনটি ছিল ৪ এপ্রিল। এর ঠিক একবছর পার করে আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) শুরু হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ‘প্রতিরোধ কর্মসূচি’, আপাতত সাত দিন তথা একসপ্তাহের জন্য। গত বছর ‘সাধারণ ছুটি’ নাম জুটলেও এ বছর কোনো নাম জোটেনি করোনা প্রতিরোধের প্রথম এই সপ্তাহের, অনেকেই যদিও একে বলছেন ‘লকডাউন’।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের বরাতে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ঠেকাতে ‘লকডাউন’ আসছে। রোববার বিকেল থেকে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর রাতে সেই বৈঠকের সারসংক্ষেপ যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অনুমোদন পেয়ে পরদিন রোববার (৪ এপ্রিল) ১১ দফা নির্দেশনার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সেই প্রজ্ঞাপনে জনসাধারণের জন্য পালনীয় ছিল সাতটি নির্দেশনা।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

সরকারের জারি করা ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ কার্যকরের প্রথম দিনটি তাহলে কেমন গেল? পুরোপুরি ‘লকডাউন’ ঘোষণা না হলেও সরকারি নির্দেশনায় চলাচল সীমিত করতে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলে ছিল নিষেধাজ্ঞা। সন্ধ্যার পর অতি জরুরি ছাড়া সীমিত করা হয়েছিল চলাচল। অফিস-আদালত খোলা রাখতে বলা হয়েছিল সীমিত জনবল দিয়ে। কাঁচাবাজার ও নিতপণ্যের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানপাটও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। প্রথম দিনটিতে কি এসব নির্দেশনা পালিত হলো সারাদেশে? বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বা কতটা তৎপর ছিল?

রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিনভর খবর দিয়েছেন সারাবাংলার প্রতিবেদকরা। চট্টগ্রাম থেকেও খবর পাঠিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট। দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টরা পাঠিয়েছেন নিজ নিজ জেলার খবর। এসব খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকার আরোপিত বিধিনিষেধের অনেকগুলোই অনুসরণ করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। তবে অনেক এলাকাতেই নাগরিকদের মধ্যে বিধিনিষেধ পালনে দেখা গেছে অনীহা, উদাসীনতা। সে তুলনায় প্রশাসনই ছিল যথেষ্ট তৎপর। এলাকায় এলাকায় চলেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাতে বিধিনিষেধ পালন না করায় অনেককেই জরিমানা গুনতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর চিত্র ছিল কেমন?

সরকারি নির্দেশনায় কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্য বাদে অন্য সব দোকান ও শপিং মল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সারাবাংলার প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, শপিং মল সবগুলোই ছিল বন্ধ। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান বাদে অন্য অনেক দোকানও খোলা থাকতে দেখা গেছে পাড়া-মহল্লায়। শুধু তাই নয়, কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকানগুলোও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল বিকেল ৪টার পর। কিন্তু রাজধানীর নাখালপাড়া, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সূত্রাপুরসহ অনেক এলাকাতেই সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দোকান খোলা দেখা গেছে। বিশেষ করে মূল সড়ক থেকে যত বেশি ভেতরের এলাকা, সেসব এলাকায় দোকান খোলা রাখার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে হোটেল-রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে। মূল সড়ক থেকে ভেতরের দিকে গেলেই রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে খাবার খেতেও দেখা গেছে।

এদিকে, সন্ধ্যা ৬টার পর অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধাজ্ঞাও সবাই মেনেছেন— এমনটি বলা যায় না। সন্ধ্যার পরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় দেখা গেছে তরুণ-প্রৌঢ়-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে। একপর্যায়ে অনেক এলাকাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিলে খোলা থাকা দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সেইসঙ্গে রাস্তা থেকেও কমে যায় মানুষের উপস্থিতি। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোও রাতারাতি ফাঁকা হতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন সড়কে গণপরিবহনের উপস্থিতি ছিল না। তবে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং সাধারণ ও ব্যাটারিচালিত রিকশার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। যারাই বেরিয়েছেন, রিকশা-সিএনজি পেতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। শুধু তাই নয়, সকালের ‘পিক-আওয়ারে’ রাজধানীর সড়কে রীতিমতো যানজটও দেখা গেছে!

শুধু তাই নয়, লেবানন ফেরত ২৭৮ যাত্রী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে বিমাবন্দর এলাকায় হট্টগোল ছিল দিনের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এছাড়া নিউমার্কেট এলাকায় দোকানপাট বন্ধের সারকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করেছেন।

চট্টগ্রামে মার্কেট খুলে দিতে বিক্ষোভ

চট্টগ্রাম থেকে সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, সরকারের নেওয়া বিধিনিষেধ আরোপের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সাধারণ মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ ছিল না মোটেও। নগরীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে মানুষের অবাধ বিচরণ করতে ও আড্ডা দিতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কমতি ছিল না ব্যক্তিগত যানবাহনের।

এদিকে, নির্দেশনা মেনেই শিল্প কারখানা খোলা ছিল। তবে গণপরিবহনের অভাবে কারখানার কর্মীদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এর সঙ্গে মার্কেট-শপিং মল খুলে দেওয়ার দাবিতে এই প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ী, দোকানি ও কর্মচারীরা। এসব কর্মসূচিতে হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে।

বিধিনিষেধ মানতে অনীহা, প্রশাসনের জরিমানা

বরিশাল থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জি এম শান্ত জানিয়েছেন, বিধিনিষেধের প্রথম দিনটি অনেকটাই ঢিলেঢালাভা‌বে কেটেছে। স্বাস্থ্যবি‌ধি মে‌নে খোলা স্থা‌নে বাজার বসানোর নি‌র্দেশনা থাক‌লেও তা মান‌া হয়নি। বাস-লঞ্চ বন্ধ থাকলেও মহাসড়কে বেড়েছে থ্রি হুইলারের চলাচল। তাতে যাত্রী পরিবহন চলেছে গাদাগাদি করে।

স‌রেজ‌মি‌নে নগরীর নথুল্লাবাদ, রুপাতলী, নতুন বাজার, অমৃত লাল দে সড়ক, বীর‌শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন ম‌হিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক, বাংলা বাজার ও বটতলাসহ বি‌ভিন্ন এলাকা ঘু‌রে দেখা গেছে, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হলেও সেদিকে তেমন মনোযোগ ছিল না কারও। বরং বরং কেউ কেউ জানালেন, ‘লকডাউন’ দেখতেই বেরিয়েছেন তারা! ‘লকডাউনে’ রাস্তা ফাঁকা থাকবে ভেবে তাদের কেউ কেউ আবার মাস্কও পরেননি!

এদিন সকাল থেকেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাস্ক না পরা এবং অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আট ব্যক্তি এবং অপ্রয়োজনে দোকান খোলা রেখে আড্ডাবাজি করার দায়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১১ হাজার ৮৮০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হুদার ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই কারণে পাঁচ জন ব্যক্তির কাছ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউর রাব্বী। দুই ভ্রাম্যমাণ আদালত মোট এক হাজার মাস্ক ও ৩০০ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন। পাশাপাশি নগরীতে ক‌রোনা স‌চেতনতায় মোটরসাই‌কেল র‍্যালি বের করে ব‌রিশাল মে‌ট্রোপ‌লিটন পু‌লিশ।

জয়পুরহাটে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মো. শামীম কাদির জানিয়েছেন, জনচলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকার কথা থাকলেও দূর পাল্লার যানবাহন ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা বা অন্যান্য যানবাহন চলতে দেখা গেছে পুরোদমে। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো খোলা অবস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময় পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে জেলা ও উপজেলা সদরে দোকানপাট খোলা ছিল কম, কাঁচাবাজারেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। তবে গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে দোকানপাট খুব বেশি বন্ধ দেখা যায়নি। রাস্তাঘাটে মানুষজনের উপস্থিতিও খুব কম ছিল না।

করোনা প্রতিরোধে সরকারের জারি করা নির্দেশনা পালনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে এদিন সকাল থেকেই মাঠে ছিল জেলা পুলিশ। দুপুরে জেলা শহরের পাঁচুরমোড়, বাটার মোড়, পূর্ব বাজার, নতুনহাট এলাকায় বাড়ির বাইরে আসা জনগণের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।

বগুড়া থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট আমজাদ হোসেন মিন্টু জানিয়েছেন, এই জেলা শহরেও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, অপ্রয়োজনে পাড়া-মহল্লায় আড্ডা দিয়েছেন। অনেকেই আবার রাস্তা ফাঁকা থাকবে ভেবে শহর ঘুরতে বের হচ্ছেন! অনেকেই মানছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধও। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে বগুড়া শহরে জনসমাগম ছিল যথেষ্ট। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকায় সকাল থেকেই এসব দোকানে ছিল ভিড়। তবে শহরের রাস্তায় রাস্তায় থাকা তরুণদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক দেখা গেছে। জেলা শহরে সদর থানা পুলিশ, র‌্যাব-১২ ও জেলা প্রশাসন থেকে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে। এছাড়া বগুড়াতেও দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।

নোয়াখালী থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বিকাস সরকার জানিয়েছেন, এই জেলাতেও সরকারি বিধিনিষেধ অম্যান্য করার প্রবণতা ছিল অনেকের মধ্যেই। বিশেষ করে এই জেলায় গণপরিবহনও চলাচল করার চেষ্টা করেছে। এ অবস্থায় বেগমগঞ্জে সোমবার দুপুর থেকে অভিযান চালিয়ে দুইটি বাসের ড্রাইভারসহ ২০টি যানবাহনকে জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করায় ৩৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

বাগেরহাটের মোংলা থেকে সারাবাংলার করেসপন্ডেন্ট মনিরুল ইসলাম দুলু জানান, সরকারি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও শহরে লোক সমাগম কম ছিল না। অনেকেই অপ্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন। তাদের অনেকেই আবার মাস্ক পরেননি। তবে বন্ধ ছিল বেশিরভাগ দোকানপাট। কেবল কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকানগুলোই খোলা ছিল। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত যানবাহনের কমতি ছিল না। স্থানীয় প্রশাসনেরও তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি এখানে।

ময়মনসিংহ থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা জানিয়েছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিভাগীয় এই শহর থেকে আশপাশের বিভিন্ন রুটে তিন চাকার সিএনজি, মাহেন্দ্র, ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের চলাচল ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বরং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সিএনজিগুলোতে গাদাগাদি করে চলাচল করছিলেন নাগরিকরা। তাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সুযোগই ছিল না। অন্যদিকে সুযোগ পেয়ে সিএনজি ও মাহেন্দ্রগুলো ভাড়াও আদায় করেছে দ্বিগুণ।

এদিকে, সোমবার সকাল থেকেই নগরীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার মেছুয়া বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বাজারসহ সড়কে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে অবস্থান নেওয়া অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। ময়মনসিংহ শহরে পুলিশের তৎপরতাও খুব বেশি দেখা যায়নি। যদিও জেলা পুলিশ সুপার বলছেন, সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। শহরে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট রানা আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সদর থানার বাগবাটিতে আসবাবপত্রের মেলা অব্যাহত রয়েছে। তিন দিনের জন্য এই মেলা আয়োজন করা হলেও তা শেষ হয়নি ১৫ দিনেও। আর মেলা প্রাঙ্গণেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। মেলায় খাজনার নামে রীতিমতো চাঁদাবাজি চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন হয়তো বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছে। আর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেবেন তারা।

মেহেরপুর থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট রফিকুল আলম জানিয়েছেন, রমজান ও ঈদের বেচাকেনার শুরু না হতেই বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন গাংনীর ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও দোকানপাট বন্ধ রাখায় তাদের পথে বসার উপক্রম হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। পরে উপজেলা প্রশাসন অবশ্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে আহ্বান জানায়।

সাতক্ষীরা থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট কামরুল হাসান জানিয়েছেন, ঢিলেঢালাভাবে এই জেলায় পার হয়েছে সরকারি বিধিনিষেধের প্রথম দিনটি। সোমবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে। দূরপাল্লার পরিবহন ও স্থানীয় রুটে কোনো যানবাহন না চললেও মাহিন্দ্রা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যানসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন যানবাহন ধুমছে চলেছে। দোকানপাট সীমিত পরিসরে খোলা থাকলেও কাঁচাবাজারে বলতে গেলে কাউকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। মাস্ক পরতেও অনীহা দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। এর মধ্যে দুপুর থেকে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নিয়ে তৎপর হতে দেখা যায় প্রশাসনকে। পরে জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সাত উপজেলায় ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ৭০টি মামলা দায়ের করেন, জরিমানা করেন ৫৪ হাজার ৮০ টাকা।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে সারাবাংলার লোকাল করেসপন্ডেন্ট এম এ হালিম জানিয়েছেন, ভৈরবসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। মহাসড়কেও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরে অনেকেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনেই দোকান খোলা রেখেছেন। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যারা বের হয়েছেন, তাদের অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। পরে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন, যারা বিধিনিষেধ বা স্বাস্থ্যবিধি মানেননি, তাদের জরিমানা ও সতর্ক করেন।

অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ সদর থেকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট সোহেল চৌধুরী জানিয়েছেন, খুব একটা কঠোরভাবে সরকারি বিধিনিষেধের প্রথম দিনটি কাটেনি তাদের। পরিমাণে অনেক কম হলেও সড়কে চলেছে গণপরিবহন। এসব যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক।  জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানেও মুদি দোকানের পাশাপাশি খোলা ছিল চায়ের স্টল। সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা গেছে অনেকের মধ্যেই। এই জেলাতেও পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

সারাবাংলা/এনএস/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন