বিজ্ঞাপন

মৃত্যুকূপের রুদ্ধশ্বাস পেরিয়ে নকআউটে ফ্রান্স-জার্মানি-পর্তুগাল

June 24, 2021 | 3:04 am

স্পোর্টস ডেস্ক

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২০ এর গ্রুপ অব ডেথের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি ফ্রান্স-পর্তুগাল এবং জার্মানি-হাঙ্গেরি। শেষ দিনের রোমাঞ্চের দিকে নজর ছিল গোটা ফুটবল বিশ্ব। নানান সমীকরণে ঝুলে ছিল জার্মানি, পর্তুগাল ও হাঙ্গেরির নকআউটের ভাগ্য। ফ্রান্স পর্তুগাল ম্যাচের রোনালদোদের জয় কিংবা ড্র করলেই নিশ্চিত পরের রাউন্ড। অন্যদিকে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ড্র করলেই নিশ্চিত জার্মানদের পরের রাউন্ড। তবে মাঠের খেলায় একচুল ছাড় দেয়নি হাঙ্গেরি। জার্মানদের ভুগিয়েছে বেশ তবে শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই মাঠ ছেড়েছে। আর ফ্রান্স-পর্তুগাল ম্যাচে রোনালদো ও করিম বেনজেমার জোড়া গোলে ম্যাচ শেষ হয়েছে ২-২ গোলের সমতায়।

বিজ্ঞাপন

হাঙ্গেরির পুস্কাস অ্যারেনায় ফ্রান্সের বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালাদোর পেনাল্টি থেকে করা গোলে লিড নেয় পর্তুগাল। এরপর বেনজেমার পেনাল্টি গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে করিম বেনজেমার দ্বিতীয় গোলে লিড নেয় ফ্রান্স। এরপর পেনাল্টি স্পট থেকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আরও এক গোলে ২-২’তে সমতায় ফেরে পর্তুগাল। শেষ পর্যন্ত সমতায় শেষ হয় ম্যাচটি।

আর গ্রুপ-এফ’র অপর ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে দুই দুইবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ছেড়েছে হাঙ্গেরি।

বিজ্ঞাপন

গ্রুপ-এফ থেকে ফ্রান্স এক জয় ও দুই ড্র’তে ৫ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে। আর জার্মানি একটি করে জয়, হার ও ড্র’তে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হয়ে নকআউটের টিকিট কাটে। আর গ্রুপ অব ডেথ থেকে পর্তুগাল জার্মানির সমান পয়েন্ট নিয়েও হেড টু হেডে পিছিয়ে থেকে পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেয় তৃতীয় দল হিসেবে।

গ্রুপ-এফ’র দুই ম্যাচের দিকেই নজর ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। রোমাঞ্চ যেখানে ছিল ম্যাচের প্রতিটি পরদে পরদে। প্রতিটি মুহূর্তে নতুন নতুন সমীকরণের জন্ম নিচ্ছিল। একবার জার্মানি গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ যাচ্ছে তো একবার পর্তুগাল বাদ। আবার পরক্ষণেই হাঙ্গেরি বাদ পড়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ফ্রান্সের সঙ্গী হিসেবে জার্মানি ও পর্তুগালই পরের পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। আর গ্রুপের তলানিতে থেকে ছিটকে পড়তে হলো ফ্রান্স ও জার্মানিকে রুখে দেওয়া হাঙ্গেরিকে।

পুস্কার অ্যারেনায় ম্যাচের শুরু থেকেই উত্তেজনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ম্যাচে। ২০১৬ সালের ইউরোর ফাইনালে পর্তুগাল এই ফ্রান্সকেই হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল। তাই বাড়তি এক ক্ষোভ কাজ করছিল ফ্রেঞ্চদের।

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের ২৭তম মিনিটে ফ্রিকিক থেকে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে ডি-বক্সে পাঠান জাও মোতিনহো। আর লাফিয়ে উঠে সেই বল হেড করতে যান দানিলো পেরেইরা। অন্যদিকে বিপদমুক্ত করতে লাফিয়ে বলে ঘুষি দিতে আসেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক হুগো লরিস। আর এখানেই একটু ধীর হয়ে পড়েন লরিস। বলে ঘুষি দেওয়ার আগে দানিলোর মাথায় ঘুষি দিয়ে বসেন তিনি। সঙ্গে রেফারি মাতেও লাহোজ পেনাল্টির বাঁশি বাজান। ৩০তম মিনিটে আর স্পট কিক থেকে গোল করে পর্তুগালকে লিড এনে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

এরপর প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে কিলিয়ান এমবাপেকে ডি-বক্সের ভেতর ফাউল করেন নেলসন সেমেদো। আর সঙ্গে সঙ্গে রেফারি এবার ফ্রান্সের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পটকিক থেকে এবারে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান পাঁচ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা করিম বেনজেমা। আর তাতেই প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়।

বিরতি থেকে ফিরেই মাত্র দুই মিনিটের মাথায় পল পগবার অ্যাসিস্ট থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ফ্রান্সকে লিড এনে দেন বেনজেমা। প্রথমে বেনজেমার গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল করা হলেও পরবর্তীতে ভিএআরের সাহায্যে ফ্রান্সের পক্ষে গোল দেন রেফারি।

বিজ্ঞাপন

পিছিয়ে পড়ার পর আরও কিছুটা মরিয়া হয়ে খেলতে শুরু করে কেননা জার্মানি ও হাঙ্গেরির মধ্যকার ম্যাচে তখনও জার্মানরা পিছিয়ে। আর এমন অবস্থা থাকলে পর্তুগালকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হবে। এমন অবস্থায় ম্যাচের ৫৮তম মিনিটে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নেওয়া শট হাত দিয়ে ঠেকান জুলেস কুন্দে। আর সঙ্গে সঙ্গে রেফারি মাতেও লাহোজ পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দলকে সমতায় ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শ করেন আরও এক বিশ্ব রেকর্ডের।

ইরানের আলী দাইয়ের গড়া আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০৯ গোলের রেকর্ডটি স্পর্শ করলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচের ৬০তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে করা গোলটি রোনালদোর ১০৯তম গোল। এটি এবারের ইউরোতে পাঁচ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন রোনালদো। এদিন ইউরো এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে ইউরোপিয়ান ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতার জায়গাটিও দখলে নেন রোনালদো। এর আগে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা ১৯ গোল নিয়ে ছিলেন শীর্ষে। ফ্রান্সের বিপক্ষে জোড়া গোলে ক্লোসাকে টপকে রোনালদো ২১ গোল নিয়ে এখন এককভাবে শীর্ষে অবস্থান করছেন।

ফ্রান্স পর্তুগালের রোমাঞ্চকর ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ওই ২-২ গোলে ড্র’তে। আর দুই দলই টিকিট কাটল নকআউটের।

গ্রুপ অব ডেথের অপর ম্যাচটিও ছিল রোমাঞ্চে ঠাসা। ম্যাচের শুরুতেই জার্মানদের চমকে দিয়ে লিড নেয় হাঙ্গেরি। ম্যাচের ১১তম মিনিটের মাথায় রোনাল্ড সাল্লাইয়ের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে হাঙ্গেরিকে লিড এনে দেন অ্যাডাম সাজলাই। এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময়টা রক্ষণ দৃঢ় রেখে লিড ধরে রাখে হাঙ্গেরি। এর ভেতর ম্যাচের ২১তম মিনিটে জার্মানদের সমতায় ফিরে দেয়নি গোলপোস্ট। ম্যাটস হামেলসের করা দুর্দান্ত হেডটি গোলপোস্টে লেগে প্রতিহত হলে হতাশ হয় জার্মানি।

বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে জার্মানরা। একের পর এক আক্রমণে জর্জরিত করতে থাকে হাঙ্গেরির রক্ষণকে। তবে গোলের দেখা মিলছিল না কিছুতেই। উল্টো ম্যাচের ৬২তম মিনিটে সাল্লাইয়ের শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসলে ব্যবধান দ্বিগুণ করা হয়নি হাঙ্গেরির। এরপরেই ভাগ্য ফিরে আসে জার্মানদের। ৬৬তম মিনিটে কিমিচের ক্রস থেকে হেড করেন ম্যাটস হামেলস সেখান থেকে বল পেয়ে ছয় গজের ভেতর থেকে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়িয়ে জার্মানদের সমতায় ফেরান কাই হার্ভাটজ।

তবে জার্মানদের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেয়নি হাঙ্গেরি। মিনিট দুই পরে অ্যাডাম সাজলাইয়ের দ্বিতীয় অ্যাসিস্ট থেকে হাঙ্গেরিকে আবারও লিড এনে দেন আন্দ্রেস স্ক্যাহাফার। ম্যাচে আবারও পিছিয়ে পড়ে জার্মানরা। আর এভাবেই ম্যাচ শেষ হলে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যেতে হবে জোয়াকিম লোর শিষ্যদের। নকআউটের টিকিট কাটতে হলে অন্ততপক্ষে ড্র করতেই হবে তাদের।

৮১তম মিনিটে রবিন গোসেন্সের পাস থেকে বল পেয়ে টনি ক্রুসের দারুণ এক শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে জার্মান শিবিরে। তবে হতাশা আর বাড়তে দেননি বদলি হিসেবে মাঠে নামা লেওন গোরেতজেকা। ৮৪তম মিনিটে টিমো ভার্নারের নেওয়া শট হাঙ্গেরির রক্ষণে লেগে ফিরে আসলে বল পেয়ে যান গোরেতজেকা। ফেরত আসা বল দুর্দান্ত এক শটে জালে পাঠিয়ে জার্মানদের দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরান তিনি। শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের সমতায় ম্যাচ শেষ হয়। আর গ্রুপ-এফ থেকে রানার্সআপ হয়ে পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেয় জার্মানি।

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন