বিজ্ঞাপন

করোনাকালে কেমন আছেন আইনজীবীরা

August 9, 2021 | 7:11 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

ঢাকা: ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে সব সেক্টরই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা, গার্মেন্টস শিল্প সবখানেই পড়েছে করোনার আঘাত। ক্ষতি পোষাতে বেশকিছু সেক্টর প্রণোদনা পেলেও আইনজীবীদের ক্ষতির চিত্রটা সামনে আসেনি। এই পেশাজীবীরা এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যে, অনেকেই পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার আইন বিষয়ক নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস’ এ যুক্ত হয়ে আইনজীবীরা এসব কথা বলেছেন। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘করোনাকালে কেমন আছেন আমাদের আইনজীবীরা।’

অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিন।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যরিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। এছাড়াও ব্যারিস্টার শওগাতুল আনোয়ার খান এবং ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ শায়েখ নিপ্পন এই আয়োজনে আলোচক হিসেবে অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান আলোচক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই করোনার মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অবস্থা খুবই নাজুক। আমার জন্মের পরে আমি এই ধরনের কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। শুনেছি শতবর্ষ আগে এরকম একটি মহামারির ঘটনা ঘটেছিল। তখন এরকম অবস্থা হয়েছিল। এই কোভিডের কারণে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের এবং সমগ্র বাংলাদেশের অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে আমাদের অনেক আইনজীবী আছেন। আমাদের প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক আইনমন্ত্রী তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আমাদের একজন তরুণ ব্যারিস্টার তানভীর পারভেজ প্রাণ হারিয়েছেন। এই করোনার কারণে আমাদের এমন অনেক আইনজীবী, আমাদের বন্ধু আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কমপক্ষে শতাধিক আইনজীবী মারা গেছেন। আমি তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’

তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আইনজীবীদের সমস্যা হচ্ছে, আইনজীবীরা প্রচণ্ড আর্থিক কষ্টে আছেন। এর কারণ হচ্ছে যে, আজ প্রায় দেড় বছর ধরে এই পেশায় ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না। আপনারাও জানেন আইনজীবীদের সঞ্চয় কিন্তু বেশি থাকে না। অন্যান্য সময় এমন হয় যে, আমরা কাজ করি, পয়সা পাই, মোটামুটি স্বচ্ছলভাবে চলাফেরা করি। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে তো আমরা কখনো পড়িনি। যার কারণে এখন ম্যাক্সিমাম আইনজীবীদের আর্থিক সমস্যা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো আমার কাছে খুব পীড়াদায়ক মনে হয়।’

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যরিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানের আইনজীবীদের অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। কারণ প্রায় দেড় বছর ধরে এই অবস্থা চলছে। তবে নতুন আইনজীবীদের আমি বলবো, কোভিড তো জীবনে বারবার আসে না। এটা একটা মহামারি। আমাদের এটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নিজেদের একটু সঞ্চয়ী হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলনে, ‘হয়তো খুব দ্রুতই ভার্চুয়াল অবস্থা থেকে সরাসরি অবস্থায় কোর্ট পরিচালনা হবে। তবে আমি বলব, এরকম আপদকালিন সমস্যা আবার কখনো সৃষ্টি হলে যেন আগে থেকেই এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদি কোনো ফান্ড থাকে তাহলে যারা নতুন আইনজীবী, তারা যেন সেখান থেকে সাহায্য পেতে পারে।’

অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘কোভিডের সময় আদালত এবং সরকারের যৌথ উদ্যোগে ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হয়। এরপর মাঝখানে একচুয়াল শুনানিও হয়েছে। তরুণ আইনজীবীদের উদ্দেশে বলব যে, এক্ষেত্রে একটা সুবিধা হয়েছে ভার্চুয়াল এবং একচুয়াল হেয়ারিং দুটোর অভিজ্ঞতাই হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই করোনাকালে সব সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস শিল্প সবাই মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমি একটা কথা বলতে চাই, এই লকডাউন আর বিধিনিষেধ যাই বলেন, এই সময়টাতে আইনজীবীদের আর্থিক সমস্যা খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে আমরা যেটা করার চেষ্টা করেছি, অল্প অল্প ফান্ড তৈরি করে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। এই ফান্ডটা খুবই অল্প, একদম নগণ্য। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেরই দাবি ছিল সরকারের পক্ষ থেকে জুনিয়র আইনজীবীদের জন্য একটি ফান্ড করা। সেটার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট বার ছাড়াও বিভিন্ন জেলা বার থেকে লোন দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কোর্ট খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেই সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ কোর্ট খোলা থাকলে একজন আইনজীবী তার নিজের ব্যবস্থাটা করে নিতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষ আলোচক ব্যারিস্টার শওগাতুল আনোয়ার খান বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, কোর্ট খোলা থাকলে আমরা ইনকাম করি, কোর্ট খোলা না থাকলে আমরা ইনকাম করি না। আমরা মান্থলি স্যালারিও পাই না, আমরা ব্যবসায়ীও না। সুতরাং আমরা কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত সেটা আমরা নিজেরা ভালই জানি। বিশেষ করে জুনিয়র আইনজীবীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক কথা সামনে আসে না, এমনও অনেক আইনজীবী আছেন যারা এই সময়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বার এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য করা হয়েছে। একটা ফান্ড করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থা যদি দীর্ঘ হয়, যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, সেই বিষয়ে আমার একটি প্রস্তাব আছে, সেটা হচ্ছে যদি ব্যাংক থেকে আইনজীবীদের স্বল্প সুদে একটি লোন নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে বিশেষভাবে উপকৃত হবে আমাদের আইনজীবী সমাজ।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তরুণ ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ শায়েখ নিপ্পন বলেন, ‘এখন সবার জন্যই কঠিন সময়। বিশেষ করে নবীন আইনজীবীদের জন্য আমার মনে হয় একটু বেশিই হতাশাব্যঞ্জক। একজন নবীন আইনজীবী একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে আদালতে প্র্যাকটিস করেন। অনেক কিছু শেখেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একজন ভালো আইনজীবী হওয়ার পথে এগিয়ে যান। করোনাকালে এই জিনিসগুলো খুবই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমি মনে করি, তরুণ আইনজীবীদের কাছে আর্থিক কষ্টের চেয়েও, এই না শিখতে পারার কষ্ট অনেক বড়।’

সারাবাংলা/এসএসএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন