বিজ্ঞাপন

জবাব দিতে ইভ্যালিকে ৩ সপ্তাহ সময় দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

August 11, 2021 | 6:15 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গ্রাহকদের দেনা-পাওনা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিতে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালিকে আরও তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় এখনই কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সময় দেওয়া হয়েছে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটিকে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১১ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইভ্যালির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান।

হাফিজুর রহমান বলেন, গত ১৯ জুলাই আমরা ইভ্যালিকে চিঠি দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে গত ৩১ জুলাই ইভ্যালি চিঠির জবাব দিয়েছে। এর মাধে ১২ দিন সময় চলে গেছে। চিঠি পাওয়ার পর এরই মধ্যে আরও ১১ দিন চলে গেছে।

তিনি বলেন, আজকের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমরা সবকিছু বিবেচনা করে তাদের তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এই তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধাপে। এর মধ্যে সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার জন্য তিন থেকে পাঁচ দিন, কাস্টমারদের দেনা-পাওনা হিসাবের জন্য সাত দিন এবং মার্চেন্ট হিসাব দেওয়ার জন্য ২১ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বুধবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির ভবিষ্যত নির্ধারণে জরুরি বৈঠকে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত ৯ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাবে ইভ্যালির দেওয়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। একইসঙ্গে গত ১ আগস্ট ইভ্যালির পক্ষ থেকে ছয় মাসের সময় চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা শেষে গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনায় ইভ্যালিকে তিন সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- ইভ্যালি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না!

এর আগে, গত ১৯ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না— তা জানতে চাওয়া হয়। ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিকল্পনা বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নোটিশে আরও জানতে চাওয়া হয়— গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত কত টাকা নিয়েছে ও মার্চেন্টদের কত টাকা পরিশোধ করেছে। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনার পরিমাণ এবং তা পরিশোধে ইভ্যালির পরিকল্পনাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি ইভ্যালি গ্রাহক ও মার্চেন্ট পর্যায় থেকে যে চারশ কোটি টাকা নিয়েছে, তা কোথায় রাখা হয়েছে— সেটিও জানাতে বলা হয়।

ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের কাছে পাঠানো চিঠির জবাব ১ আগস্টের মধ্যে দিতে বলা হয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেওয়া হলেও কোম্পানিটি মন্ত্রণালয়ের চাহিদামতো সব তথ্য জানায়নি। এসব তথ্য জানাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ছয় মাস সময় চেয়েছে ইভ্যালি।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কারণ দর্শানোর নোটিশের পূর্ণাঙ্গ জবাব যথাসময়ে না দেওয়ায় ইভ্যালির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ৮ আগস্ট ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। জানানো হয়, বুধবার (১১ আগস্ট) প্রথম বৈঠকে বসবে ইভ্যালির ভবিষ্যৎ নির্ধারক এই কমিটি।

ইভ্যালিকে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই তৎপরতার নেপথে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন। গত জুন মাসে ইভ্যালির আর্থিক অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি তাদের পরির্দশক প্রতিবেদনে বলেছে, এ বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৪ কোটি টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ করেনি। আবার মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দেনার পরিমাণ ১৯০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ইভ্যালির চলতি সম্পদের মূল্য মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ইভ্যালির পুরো সম্পদ দিয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনার মাত্র ১৬ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইভ্যালির প্রকৃত দায়-দেনার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের এসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ ক্রেতা-ভোক্তারাও নড়েচড়ে বসেন। ইভ্যালি প্রকৃতই গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ কিংবা অর্থ পরিশোধ করতে পারবে কি না— তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয় অনেকের মধ্যেই। তবে এর মধ্যেও ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজির হয়ে বলেছেন, ইভ্যালি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এর মধ্যেই গত ২৭ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ইভ্যালি জানায়, দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ যমুনা গ্রুপ এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ইভ্যালিতে। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পর ধাপে ধাপে বাকি আটশ কোটি টাকাও বিনিয়োগ করবে যমুনা গ্রুপ।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন