বিজ্ঞাপন

আগস্টে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ৭টি, কারা হেফাজতে মৃত্যু ৫

August 31, 2021 | 10:14 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

আগস্ট মাসে সারাদেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে সাতটি। এসব ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচ জন। আরও একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হয়েছেন। একটি ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নদীতে তলিয়ে গেছেন। এদিকে, একই সময়ে কারা হেফাজতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ সংগৃহীত তথ্য দিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এই মানবাধিকার সংগঠনটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতটি ‘বন্দুকযুদ্ধে’র মধ্যে একটিতে কোনো হতাহততে ঘটনা ঘটেনি। বাকি ছয়টি ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন, একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হয়েছেন, একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নদীতে ভেসে গেছেন।

কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাগুলোর বিবরণ দিয়ে এমএসফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই দিবাগত রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একাধিক মামলার আসামি মো. পারভেজ (২৮) নিহত হন। কক্সবাজার টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় ব্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নুরুল হক ওরফে নুরু ডাকাত (৪৫) নিহত হন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা মামলার আসামি কাজল (৪৮) নিহত হন। অন্যদিকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ২৫ ও ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা দুই তরুণ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, কক্সবাজার টেকনাফের হোয়াইক্যং ও টেকনাফের বিজভীখাল এলাকায় বিজিবির সঙ্গে মাদক কারবারিদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মীর কাসেমকে (২৫) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে এবং আরেকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নদীর স্রোতে তলিয়ে যান। এমএসএফের প্রতিবেদন বলছে, প্রতিটি ঘটনাতেই র‌্যাবের দাবি, মৃত ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী ছিল।

এদিকে, আগস্টে যে পাঁচ জন কারা হেফাজতে মারা গেছেন তাদের মধ্যে একজন নারী, বাকি চার জন পুরুষ। এর মধ্যে ৪ আগস্ট সকালে গাজীপুর জেলা কারাগারের বন্দি আবদুর রহিম (৫৫) বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এদিকে, ১২ আগস্ট শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান জেলা কারাগারের বন্দি উম্মে হাসিনা (৪১)। ১৪ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লিয়াকত আলী (৭২)। পরে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৩ আগস্ট সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় বার্ধক্যজনিত রোগসহ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়ার (৭০)। তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সবশেষ ২৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় জেলা কারাগারের কয়েদি আব্দুর রহমানকে (৫৪)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বিজ্ঞাপন

কারা হেফাজতে মৃত্যুর এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এমএসএফ জানিয়েছে, প্রতিমাসেই কারাগারের বন্দিদের মৃত্যু ঘটেছে বাইরের হাসপাতালগুলোতে, যা কারাগারগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা নির্দেশ করে। কারাগারগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত করে সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত।

এদিকে, আগস্ট মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ও শ্রমিক বিক্ষোভ দমনে বল প্রয়োগের অভিযোগের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের এই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে থাকা লিটন (৪৫) নামের এক আসামি থানার লকআপে থাকা অবস্থায় মারা যান। পুলিশের দাবি, থানার লকআপের ভেতরে থাকা কম্বল ছিঁড়ে ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। এমএসএফ মনে করছে, থানায় রিমান্ডে থাকা আসামির মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এদিকে, ৫ আগস্ট গাজীপুরের টঙ্গী ভাদাম এলাকায় ক্রসলাইন লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার মূল ফটকের সামনে সকাল থেকে বিক্ষোভ করছিলেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাদের ওপর গুলি ছোঁড়ে শিল্প পুলিশ। ২১ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৫৮ রাউন্ড শটগান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন পুলিশ সদস্যরা। এতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন। এমএসএফ মনে করছে, মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করে শান্তিপূর্ণভাবেও এ ঘটনার সমাধান করা যেত।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন