বিজ্ঞাপন

‘উন্নয়নে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ, ভারতের ছুঁই ছুঁই’

December 1, 2021 | 4:10 pm

স্টাফ করেসপনডেন্ট

ঢাকা: আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পাকিস্তানকে পেছে ফেলেছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে আরেক ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেললেও কিছু ক্ষেত্রে ছুঁই ছুঁই করছে। গত ৩০ বছরের হিসেবে এ অর্জন হয়েছে। পোশাক শিল্পের অগ্রগতি, দারিদ্র নিরসন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি এবং দ্রুত নগরায়নের ফলে এই সাফল্য এসেছে। সেইসঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিকাশ দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণ এবং সামাজিক কার্যক্রম।— বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উন্নয়ন সম্মেলন ২০২১-এ এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে ‘বাংলাদেশ ইন কমপারেটিভ পার্সপেক্টিভ’ প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন অধিবেশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন- সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, আলস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. এসআর ওসমানি প্রমুখ।

প্রতিবেদনে ড. বিনায়ক সেব বলেন, ‘ভারতের তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরালা যেভাবে এগিয়েছে, উত্তর প্রদেশ ও বিহার সেভাবে এগোয়নি। এটা যেন ভারতের মধ্যে অন্য ভারত। ব্যাপক আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। আবার পাকিস্তানের ইসলামাবাদে যে উন্নয়ন হয়েছে সেভাবে বেলুচিস্তানে হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে এমন বৈষম্য নেই। দেশ স্বাধীনের আগে যেমন পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য ছিল। এখন সেরকম নেই। তবে কুড়িগ্রামের দারিদ্র আর নারায়ণগঞ্জের দারিদ্র এক নয়। এটা হয়েছে এলাকার কারণে। যেমন- নদী ভাঙা, উপকূলীয়, হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। এটা করাটাও কঠিন। অবস্থান ও প্রাকৃতিক কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি।’

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ভারতের কাছাকাছি গেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। অথচ এখন সেটা ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১৯৯০ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় ৩ দশমিক ২৬ হারে বাড়তো, এখন কমে ১ দশমিক ১৪ হারে বাড়ছে। একইভাবে ৯০’র দশকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এটা এখন আরও কমে শূন্য দশমিক ৮৬ হয়েছে। অথচ মাথাপিছু আয়ে ৯০ দশকে পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এখন পাকিস্তানের চেয়ে মাথাপিছু আয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া উৎপাদন খাতে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯০’র দশকে এখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা এখন হয়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অথচ উৎপাদন খাতে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। একই সময়ে ভারতে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, অথচ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে উৎপাদন খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে যাচ্ছে। ৯০’র দশকে এখাতে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

নগরায়নেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯০’র দশকে বাংলাদেশের নগরায়ন হার ছিল ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ভারতে একই সময়ে নগরায়নের হার ছিল ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, এখন দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। পাকিস্তানের নগরায়নে ওই সময়ে হার ছিল ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যা এখন হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।

ভারত পাকিস্তানকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলার অন্যতম কারণ, কর্মসংস্থানে নারীর উপস্থিতি বেড়েছে। ৯০’র দশকে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে নারী উপস্থিতির হার ছিল ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অথচ এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে নারীর উপস্থিতি ছিল ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে, পাকিস্তানে কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও এখন তা বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবুও বাংলাদেশ সমান হতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, কমিনিউনিটি ক্লিনিক, হাওর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্পে আমি বেশি নজর দিয়ে থাকি। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। এসব কারণে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ যেসব প্রকল্প সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নেবে সেগুলোকে উপরে রাখছি। বিআইডিস স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না।’

ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির জনকের কন্যার হাত ধরে তার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের আজকের উন্নয়ন বঙ্গবন্ধু সুদুর প্রসারী চিন্তার ফসল। কেননা দেশ স্বাধীনতার পরপরেই তিনি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খুঁজেছেন। সেই সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।’

রেহমান সোবহান বলেন, ‘পোশাক শিল্পের হাত ধরে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে সফল ভূমিকা পালন করেছে। গত ৪০ বছরে ওষুধ, চামড়া, শিপবিল্ডিং ও সিরামিকসহ বিভিন্ন শিলপ বিকাশ লাভ করেছে। রফতানি ক্ষেত্রে বহুমুখীকরণ করতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকসহ এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করেছে। সেইসঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে। তবে আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তির উন্নয়ন ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকবিলা করা।’

অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের দারিদ্র নিরসনে অগ্রগতি হলেও বৈষম্য বেড়েছে। দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। সেব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন