মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। লার্নিং অ্যাক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি ইডুকেশন (এলএআইএসই) অপারেশন প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এ সংক্রান্ত অর্থ সহায়তার বিষয়টি অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান) আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ সমতা অর্জনকারী প্রথম কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার ওপর গভীরভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেক দরিদ্র মেয়ে স্কুল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।’

‘বিশ্বব্যাংক শেখার ফলাফল এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করে শেখার ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে থাকবে। যেন শিক্ষার্থীরা সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ জীবনযাপন এবং সমাজে সংগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে স্নাতক হয়’ বলেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষায় লার্নিং অ্যাক্সিলারেশন অপারেশন সরকারের মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে সমর্থন করবে। শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রোগ্রামটি ৬ এবং ৮ তম গ্রেডের জন্য গণিত, ইংরেজি এবং বাংলার মতো মূল বিষয়গুলোতে ফোকাস করবে। কারণ এগুলো ভবিষ্যতের শিক্ষার ভিত্তি। এটির জন্য ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষতা বর্তমান ২৮ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশে এবং বাংলায় ৬৬ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ঝরে পড়ার হার কমাতে, প্রোগ্রামটিতে ৮০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় যৌন হয়রানি ও প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে তা নিশ্চিত করা হবে। আরও প্রায় ৭ হাজার ২০০টি স্কুলে পড়ার দক্ষতা উন্নত করার জন্য প্রোগ্রাম থাকবে। ১৫ হাজার শিক্ষক তাদের শেখানোর দক্ষতা উন্নত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রোগ্রামটি মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিংকেও সহায়তা করবে এবং কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লক্ষ্যযুক্ত বিদ্যালয়ে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন শেখার ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার করতে প্রোগ্রামটি নতুন অনুমোদিত পাঠ্যক্রমের ডিজিটাইজেশন করা হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে রোলআউটের পাশাপাশি শিখন পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত প্রতিকারমূলক ক্লাসগুলোকে সমর্থন করবে। এটি সরকারের মিশ্রিত শিক্ষার মাস্টারপ্ল্যানকেও সমর্থন করবে ক্লাসে এবং অনলাইনে। শিক্ষার সংমিশ্রণ এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে করা সংস্থানগুলি অফার করবে যেন তারা তাদের নিজস্ব গতিতে শিখতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এডুকেশন স্পেশালিস্ট এবং প্রকল্পের টিম লিডার টি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রাখার জন্য প্রোগ্রামটি উপবৃত্তি দেওয়ার বাইরেও অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেবে। যারা বাদ পড়েছেন তাদের পুনরায় ভর্তি হতে সাহায্য করবে। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্কুলগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হলেও মিশ্রিত শিক্ষা ট্র্যাকে শিখতে সাহায্য করবে। প্রোগ্রামটি জলবায়ু-স্মার্ট মানসিকতা এবং আচরণকে লালন-পালন করার জন্য পাঠ্যক্রমের মূলধারার জলবায়ু শিক্ষাকেও দেবে।’

ক্রেডিটটি বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে এসেছে, যা রেয়াতি অর্থায়ন প্রদান করে এবং পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ ৩০ বছরের মেয়াদ রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তাকারী প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে, বিশ্বব্যাংক দেশটিকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার অনুদান, সুদমুক্ত এবং রেয়াতি ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৬টি চলমান প্রকল্পে মোট ১৬.০৭ বিলিয়ন প্রতিশ্রুতিসহ বিশ্বের বৃহত্তম প্রোগ্রাম রয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/একে