বিজ্ঞাপন

নৌকা ও স্বতন্ত্র লড়াই নিয়ে কঠোর বার্তা শেখ হাসিনার

December 21, 2023 | 10:37 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনি প্রচারও শুরু হয়েছে। তবে নির্বাচনে নেই রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা রয়েছে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগসহ সমমনা দল ও জোটগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এবারই প্রথম দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এবার দলের ভেতর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু নির্বাচনি প্রচার শুরু হওয়ার পর দেশের কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতা নিয়ে উৎসাহ দেওয়ার পর এবারই প্রথম মুখ খুললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার অভিপ্রায়ে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি ও সংঘাতের ব্যাপারে এবার দিলেন কঠোর বার্তা।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে পাঁচ জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে অবস্থিত জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয় থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। প্রথমে তিনি সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর জেলাগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়কালেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এর আগে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি জনসভা শুরু করে আওয়ামী লীগ। সেই ধারাবাহিকতায় আজ পাঁচ জেলার ভার্চুয়াল জনসভায় যোগ দিয়ে কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গতকালের জনসভায় নিজ দলের প্রার্থীদের জন্য ভোট প্রার্থনা করলেও স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো বিশেষ বার্তা দেননি তিনি। কিন্তু আজ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্পষ্টভাবে কঠোর বার্তা দিলেন।

বিজ্ঞাপন

এদিন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে চারটি সংসদীয় আসনে জয়যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাটোর একটি ঐতিহ্যবাহী জায়গা। আর তাছাড়া আগেই বলেছি, জেলার একটা আলাদা গুররুত্ব আছে। আমরা চাই, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। তবে সেইসঙ্গে আরেকটা কথা বলব, নিজেদের মধ্যে কোনোরকম সংঘাত দেখতে চাই না। কারণ, আমরা সিট উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সবাই ইলেকশন করবে। জনগণ আসবে, ভোট দেবে। জনগণের সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের যাকে তাদের পছন্দ তাকে তারা ভোট দেবে। আর ভোট চাওয়ার অধিকার সকলের আছে। নির্বাচনটা আমরা সেভাবেই করতে চাই, যাতে গণমানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে। ভোটার যেন আসে এবং তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে। সে কারণে আমি আপনাদের বলব, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। এবং নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠ হয় সেই ব্যবস্থা নেবেন।’

তার আগে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ ভোট দেবে। ভোটের মালিক জনগণ। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। হ্যাঁ, আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি। আমাদের নৌকার প্রার্থীও আছেন, স্বতন্ত্র আছেন এবং অন্যান্য দলও আছে। প্রত্যেকে জনগণের কাছে যাবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই নির্বাচিত হবে। কেউ কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। কোনোরকম সংঘাত-মারামারি দেখতে চাই না। আমাদের দলেরও যদি কেউ করে তাদের কিন্তু রেহাই নাই। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি এটাই বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে আপনারা সুষ্ঠভাবে করবেন। নিজের দলের মধ্যে ঐক্য রাখবেন। আর যেখানে যে দলের যেই থাক, যত প্রার্থী আছে জনসংযোগ করুক স্বাধীনমতো। জনগণকে সুযোগ দেন তার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার। তাতে আামদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।’

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আমার এই বার্তাটা সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিন। নৌকায় ভোট দিয়ে এই দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তি এসেছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’

এর আগে, নভেম্বরে গণভবনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার কৌশল নিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সেখানে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থিতার দ্বার মুক্ত রাখার ঘোষণা দেন। এতে পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন।

শুরুতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ডামি প্রার্থীর ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। ওই সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বার্তা নেতাকর্মীদের দিতে পারেননি। পরে আস্তে আস্তে তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট কথা বলা শুরু করেন। তখন সংশয় কেটে যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে। আর আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নিজ দলের প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের ব্যাপারে স্পষ্ট বার্তা দিলেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন