বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক সংকটের দায় ইসির নয়: সিইসি

January 6, 2024 | 4:39 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচন নিয়ে চলমান এই সংকটকে একান্তই রাজনৈতিক সংকট বলে অভিহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বলেছেন, রাজনৈতিক সংকটের নিরসন রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। এই সংকটের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়।

বিজ্ঞাপন

সিইসি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা। রাজনৈতিক কোনো বিতর্কে সম্পৃক্ত বা জড়িত হওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা নির্বাচনকে নির্বাচন হিসেবেই আয়োজন করতে যাচ্ছি। যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, এটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকবে। এর সুরাহা রাজনীতিবিদরাই করবেন। আমরা শুধু সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা আয়োজন করব। এর জন্য আপনারা সবাই আমাদের সহায়তা করবেন।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন বিকেলে দেশি ও বিদেশি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। এ সময় তিনি নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দেন।

আরও পড়ুন- ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে— বিএনপির বিরুদ্ধে ইসিতে আ.লীগের অভিযোগ

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। এ ছাড়া অন্য নির্বাচনগুলো সে অর্থে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনকেও অনেকে বিতর্কিত বলে থাকেন। তবে নির্বাচনের আগে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি, নির্বাচনের পর কিছু কিছু বিতর্ক উঠেছিল। আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এবারের নির্বাচনেও আমাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সিইসি আরও বলেন, কিছু ঘটনা ঘটেছে। বড় একটি রাজনৈতিক দল ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরোধিতা করতেই পারেন। এটি সাংবিধানিকভাবে তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তারা অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে জনমত তৈরির চেষ্টা করতে পারেন যেন মানুষ ভোট না দেয়। কিন্তু কেউ যদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়, সেটি অপরাধ হবে। কারণ ভোট দেওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আগামীকালও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া বা প্রতিবন্ধকতা তৈরির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে েএই নির্বাচন নিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মিট দ্য প্রেস। ছবি: সারাবাংলা

ভোটের একদিন আগে একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় চারজন দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এ ঘটনা কে বা কারা করেছে, আমি জানি না। কেউ কেউ অনুমান করতে পারেন কারা ঘটিয়েছে। তাদের অনুমানের সপক্ষে ভিত্তিও থাকতে পারে। কিন্তু এটা সত্য— যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় আমরাও দুঃখ ভারাক্রান্ত, ব্যথিত। এসব ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা সহমর্মী। এ ধরনের ঘটনা কখনোই ঘটা উচিত নয়। কোনো দল বা সংগঠন এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে সেটি অমার্জনীয় অপরাধ।

বিজ্ঞাপন

সিইসি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সংকটের কথা আমি আগেই বলেছি। বড় একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচার করবে, সহিংস পন্থায় নির্বাচনকে প্রতিহত করবে না। আমরা সে কথা বিশ্বাস করেছিলাম। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখন এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়, সেটি বিশ্বাস করাই উচিত। ফলে আমরা মনে করেছি, কোনো সংকট থাকবে না। নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হবে। ভোট দিতে মানুষকে বাধাগ্রস্ত করা হবে বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হবে, এমনটি হয়তো হবে না। তবে এমনও হতে পারে, অগ্নিকাণ্ড বা সহিংস ঘটনার মাধ্যমে জনমনে ভীতি তৈরি করা হতে পারে, যেন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পায়। এটি নিঃসন্দেহে অপরাধ এবং গুরুতর অপরাধ। রাজনীতিতে মতানৈক্য হতে পারে, মতবিরোধ হতে পারে। এখন কোনো রাজনৈতিক দল যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাহলে সংলাপ বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন করা যেতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, নির্বাচন কমিশন জোর করে এই দায়িত্ব নিতেও পারে না।

আরও পড়ুন- ভিডিও কনফারেন্স করে ট্রেনে আগুন দেয় বিএনপি: দাবি ডিবির

নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলের আস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে কি না, তৈরি করতে না পারলে তার দায় কার— এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সংবিধান ও আইন দ্বারা নির্ধারিত। আমাদের দায়িত্ব নির্ধারিত বিধি ও পদ্ধতি মেনে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এখানে আস্থা বা অনাস্থার বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছি না। অনাস্থা যদি থাকে, সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমরা এখন যেটি করতে পারি, নির্বাচনকে ৫০ বছর বা ১০ বছর পর্যন্ত স্থগিত করে দিতে পারি। তাহলে আমরা নির্বাচন ১০ বছরের জন্য বন্ধ করে দেই, সেই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করুন? কোনো আইন বিশেষজ্ঞ কি বলবেন যে এটাই আমাদের করা উচিত?

সিইসি আরও বলেন, একজনের দায় আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ভোটে যদি পক্ষপাতিত্ব হয়, কারচুপি হয়, ভোট চুরি হয়, পেশী শক্তির ব্যপক ব্যবহার হয় বা ভোটের অন্যান্য অনিয়মগুলো যদি ব্যাপক আকারে হয়, তাহলে তার জন্য ইসিকে দায় দেওয়া যাবে। তবে সেই দায়ও পুরোপুরি দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ প্রকৃত অর্থে নির্বাচন হলো ভোটগ্রহণ যেটি আগামীকাল (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হবে। সেখানে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বেও কিন্তু আমরা নই। রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সহকারী রিটর্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকবে অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের। আর পোলিংয়ের (ভোটগ্রহণ) ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। তাকে বারবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ তার ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব। কোনো অনিয়ম বা ভোট চুরি ঠেকানো তার দায়িত্ব। তিনিও কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মী নন। ফলে এককভাবে সব দায় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘সরকার আবারও আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে’

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। এটি আপেক্ষিক বিষয়। কেউ হয়তো বলবেন ভোট চমৎকার হয়েছে, কেউ বলবেন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা চেষ্টা করব আমাদের দিক থেকে নির্বাচনকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। এ কারণেই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে, নির্বাচনের সব দিক স্বচ্ছতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন যেন জনগণ স্বচ্ছভাবে সবকিছু দেখতে পান। আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি ফুটে উঠবে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন