বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ‘ইউটার্নে’ হতাশ বিএনপি

January 12, 2024 | 6:24 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে পশ্চিমাদের ‘ইউটার্ন’ হতাশ করেছে বিএনপিকে। তার ওপর টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর অভিনন্দন বার্তাকে বিএনপির রাজনীতিতে দারুণ এক কূটনৈতিক ধাক্কা হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা।

বিজ্ঞাপন

তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো যেসব পদক্ষেপের (স্যাংশন, ভিসানীতি, অর্থনৈতিক অবরোধ) কথা বলে আসছিল, সেগুলো নির্বাচনের আগে নিলে বিএনপির আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া সহজ হতো। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর এখন কোনো পদক্ষেপ নিলেও সেটি কোনো কার্যকর ফল বয়ে আনবে না।

তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন বিএনপি নেতারা। দলটির নেতারা মনে করেন, আগামী দিনে যা করার তা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানের দিকে নজর রেখেই করতে হবে তাদের। সুতরাং এই মুহূর্তে কোনো ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে এ কুল-ও কুল— দুকুল হারিয়ে বিপদে পড়ার কোনো মানে হয় না বলেই মনে করছেন তারা।

আরও পড়ুন- হাল ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি

বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতারা এখন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র অথবা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো কোনো বিশেষ দল বা সরকারের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে পদক্ষেপ নেয় না। বৈশ্বিক ও ভূরাজনীতির কৌশলগত দিকগুলো অবশ্যই তাদের বিবেচনায় থাকে। কারণ পশ্চিমাদের মানসিকতা বাংলাদেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠন প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের কার্যপদ্ধতিও বাংলাদেশের থেকে ভিন্ন। সেখানে মাত্র একজনের কথায় নীতি প্রণয়ন হয় না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে সবকিছুতে ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি ভিন্ন দল ও মতকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। চাইলে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে না।

সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশ ইস্যুতে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না এবং এতদিন পিটার হাসের দৌড়-ঝাঁপের ওপর ভরসা করা ঠিক হয়নি বলেও উপলব্ধি বিএনপি নেতাদের।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর অতিমাত্রায় ভরসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যখন কোনো একটি দেশে অগণতান্ত্রিক শক্তি জনগণের ওপর চেপে বসে এবং তারা শাসক শ্রেণির হাতে অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করে, তখন তারা চায়, কেউ না কেউ তাদের উদ্ধার করুক। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা ও গুঞ্জন এ কারণেই।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

এদিকে নির্বাচনের একদিন পরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নির্বাচন সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক হয়নি বলে বিবৃতি দেওয়ার পর কিছুটা হলেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল বিএনপি এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা; যদিও বিএনপিসহ ভোট বর্জনের আন্দোলনে থাকা দলগুলো সে সময় বলেছিল, নির্বাচনের পরের এই বিবৃতির এক ধরনের মূল্য থাকলেও সরকার গঠনের পরে এটি বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না কিংবা সরকারকে চাপেও ফেলা যাবে না। কারণ ভূরাজনৈতিক তথা বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীত বলয়ে থাকা দেশ রাশিয়া ও চীনসহ অনেক দেশ এরই মধ্যে নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারত তাৎক্ষণিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীদের এমন নানা হিসাব-নিকাশের মধ্যেই বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে বাংলাদেশে অবস্থানরত সারাবিশ্বের কূটনীতিকদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও গিয়ে হাজির হন। তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকেও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি নির্বাচনের আগে বিএনপির ‘পরম বন্ধু’র ভূমিকা পালন করা পিটার ডি হাস।

সূত্রগুলো বলছে, এত কিছুর পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সম্ভাব্য পদক্ষেপের দিকে নজর রেখে পরবর্তী আন্দোলন ও কর্মকৌশল নির্ধারণের পক্ষে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেছেন, সরকারকে দ্রুত চাপে ফেলা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন। সে কারণে তাদের পরামর্শেই বিএনপিকে চলতে হবে। নির্বাচনের আগে কোনো পদক্ষেপ বা স্যাংশন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসেনি, এটা ঠিক। তাই বলে ভবিষ্যতে আসবে না, এমন ঘোষণা তো তারা দেয়নি।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন