বিজ্ঞাপন

কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার

March 10, 2024 | 3:37 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকার একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে (বিসিজি) অতি-আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার দিয়ে সজ্জিত করে একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১০ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সদর দফতরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ‘২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং কোস্ট গার্ড দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এ সময় কোস্টগার্ডের অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেম, ৬টি স্টেশন ও আউটপোস্ট এবং তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। কোস্ট গার্ড বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক জাহাজ, হেলিকপ্টার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করবে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খুব শিশগিরই এ বাহিনীতে যুক্ত হতে যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, মেরিটাইম সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম, হোভারক্রাাফট ও দ্রুতগতিসম্পন্ন বোট।

তিনি বলেন, পাশাপাশি সমুদ্র নির্ভর পেশায় নিয়োজিত জনসাধারণের ও নৌ পথের নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ডের গভীর সমুদ্রে টহল উপযোগী আরও ৪টি ওপিভি, ২টি মেরিটাইম ভার্সন হেলিকপ্টার সংগ্রহের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেমের অন্তর্ভুক্তি। যা কোস্ট গার্ডকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২টি হেলিকপ্টার উইংয়সহ এভিয়েশন উইং গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করেছি। যা সংযোজনের মাধ্যমে কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে ৪টি অফশোর প্যাট্রল ভেসেলসহ বিভিন্ন আকারের ১৬টি জাহাজ ও ১৩৮টি বোট কোস্ট গার্ড বহরে সংযোজিত হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে কোস্ট গার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কোস্ট গার্ডের নবসংযোজিত ভিস্যাটনেট সিস্টেম ও ঢাকা জোন, পূর্ব জোন এবং দক্ষিণ জোনের বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ১৯৯৫ সালে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ২৯ বছরে আজ একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের আনা বিলের কারণেই ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’ একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার কোস্ট গার্ডের বিভিন্ন জোনের জন্য ভূমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং নতুন নতুন জলযান সংযোজনের মাধ্যমে এই বাহিনীর অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাহিনীর স্টেশন ও আউটপোস্টসমূহে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া বিভিন্ন আকারের জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ডের জোনগুলোতে কর্মরত সদস্যদের বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস তৈরির মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে তিনি নিজেই ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রা’ নামে কমিশন করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় এই বাহিনীর জন্য ইনশোর প্যাট্রল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট তৈরি করা হয়েছে। এ বাহিনীর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন জাহাজ ও সরঞ্জাসের অন্তর্ভুক্তি এ বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর আধুনিকায়নে রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী বর্তমান জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার জন করার পরিকল্পনাও তার সরকারের রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র সম্পদের ওপর দেশের জনগণের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ‘দ্য টেরিটেরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন। যদিও জাতিসংঘ এই আইন প্রণয়ন করে ১৯৮২ সালে। তবে ’৭৫ পরবর্তী জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সরকারগুলো এই আইন বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। ’৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ আবার এ নিয়ে কাজ শুরু করে এবং সমুদ্রে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতির পথ অনুসরণ করেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দৃষ্টিও এখন দেশের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে। সমুদ্রপথে আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে এবং সুনীল অর্থনীতির বিশাল ভাণ্ডার মজুত রয়েছে এই বঙ্গোপসাগরে। এই সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, এই সমুদ্র সীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে, সেই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাছাড়া সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটও আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। কারণ গবেষণা একান্তভাবে দরকার। মৎস গবেষণায় তার সরকার জাহাজের ব্যবস্থা করেছে। সার্বিক সমুদ্র গবেষণার জন্য জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপও সরকার নিচ্ছে এবং পর্যটন শিল্পকেও গড়ে তুলছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ৮০ মাইল বালুকাময় সমুদ্র সৈকত রয়েছে। যা অন্য কারও নেই। সেটাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় করাই তার সরকারের লক্ষ্য। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা এমন, যেখানে আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধন রচনা করতে পারি। সেভাবেই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে দরকার।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষের জানমাল রক্ষা করা, গভীর সমুদ্রে যারা যান, মৎস আহরণে বা অন্যান্য কাজে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও বন্যায়সহ দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও এই বাহিনী যথাযথ অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের যে লক্ষ্য আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা— সেজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান নির্ভর করে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বিশ্বে মাথা উঁচু করেই চলতে চাই। সেজন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা। সেই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দারিদ্রের হার হ্রাসসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি সরকার বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আর একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, সকলেরই মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হবে। ‘ডেল্টা পরিকল্পনা -২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা করে আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।

অনুষ্ঠানে বর্তমান ও সাবেক কোস্ট গার্ড সদস্যদের অবদান ও সাহসিকতার জন্য তাদের মাঝে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পদক, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক, রাষ্ট্রপতি কোস্ট গার্ড পদক এবং রাষ্ট্রপতি কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নবসংযোজিত কোস্ট গার্ড ভিস্যাটনেট সিষ্টেম এর ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন