September 2, 2018 | 5:25 pm
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ বলেই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তাড়াহুড়া করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে রোববার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব— এটা তো আমাদের একটা ঘোষণাই ছিল। ইভিএম তারই অংশ। নির্বাচনে এটি একটি নতুন প্রযুক্তি। আমরা সবসময় নতুন প্রযুক্তি এনেছি। এখন তো আমাদের সবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে, সবার জন্য বায়োমেট্রিক কার্ডের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রবর্তনের ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমরা বাজার করি অনলাইনে, গরু পর্যন্ত অনলাইনে কিনে থাকি। তবে প্রযুক্তি যেমন আমাদের সুবিধা দেয়, মাঝে মাঝে সমস্যাও তৈরি করে— এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন পৃথিবীর বহু দেশেই হয়। আমিই কিন্তু সবসময় ইভিএম নিয়ে আসার পক্ষে ছিলাম এবং আমি এখনও এর পক্ষে আছি। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক— তাড়াহুড়া করে এটাকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এটা একটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। কাজেই আগে এটা আমাদের পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে রেজাল্ট এসেছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি, ট্রান্সপারেন্স ব্যালট বাক্সের ব্যবহারও আমরা শুরু করেছি।’
এর কারণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ভোটের অধিকারটা মানুষের হাতে থাকুক। কাজ করেছি মানুষের জন্য। ভোট দিলে দেবে, না দিলে না দেবে। আমার তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ কারও কাছে আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি যা বলি, মন থেকে বলি। কেন বলি, তারও কারণ আছে। সেটা পরে বলব।
‘এখন ইভিএম একটা নতুন প্রযুক্তি, বিশ্বব্যাপী এটা চলমান। এর বিরুদ্ধে বিএনপি খুব সোচ্চার, সেটা খুব স্বাভাবিক। এটা আপনাদের বুঝতে হবে, বিএনপির জন্মস্থানটা কোথায়। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। জিয়ায়উর রহমান যে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাতেও কোনো সন্দেহ নাই,’— বলেন শেখ হাসিনা।
বিএনপির জন্ম প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের রাজনীতিতে যে কারচুপি করা, এটা তো স্বাধীনতার পর প্রথম নিয়ে আসে জিয়াউর রহমানই। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে পরে ভোট দিয়ে ক্ষমতাকে বৈধ করতে চেয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই দেশ চলেছে। আজ বিএনপি যখন সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা বলে, তখন তো বলতে হয়, তাদের জন্মস্থান থেকে আগে খোঁজ করুক। তাদের জন্মটা কোথা থেকে হয়েছে, সেই জন্মসূত্রটা আগে তারা দেখুক। যাদের জন্মটাই কারচুপির মধ্য দিয়ে, তারা আবার কারচুপির বিরুদ্ধে কথা বলে!
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এ কারণে ইভিএম চায় না যে কারচুপি করার একটা ভালো টেকনিক আছে, যে টেকনিকটা এখনও আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি। আমাদের অনেকেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু এখনও সম্পূর্ণ ধরতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের তো অর্থের অভাব নেই। তারা সব কিনে ফেলতে পারে। ব্যালট একটা না, একটা ওখানে হাতে পায়, সাথে আরও দুইটা থাকে। এখন ইভিএম হলে তো ওই কারচুপিটা করতে পারবে না। একটার জায়গায় দুইটা-তিনটা ব্যালট দিতে পারবে না। সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরতে পারবে না। সেজন্যই তারা আপত্তি জানাচ্ছে। এটা তো খুব ষ্পষ্ট বোঝাই যায়।’
পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ইভিএমের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই, কিছু কিছু জায়গায় শুরু হোক। শহরগুলোতে শুরু হোক, মানুষ এটা দেখুক এবং প্রযুক্তিতে কোনো ধরনের সিস্টেম লস হয় কি না সেটা, পরীক্ষা করে দেখা যাবে। যদি কোথাও তেমন সিস্টেম লস থাকে, সঙ্গে সঙ্গে সেটা বাতিল করে দিয়ে আবার করা যাবে। এটাই শেষ কথা, তা তো না। এখানে এত আপত্তির কি আছে?’
বিমসটেক সম্মেলনে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বললেন, তারা একটা সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে যে কেউ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে মোবাইলে ভোট দিতে পারবে। মোবাইল দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারলে ভোটের ক্ষেত্রে আস্থা রাখতে পারবেন না কেন?’— প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে, আঞ্চলিক জোট বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ৩০ আগস্ট নেপাল যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন ও শুক্রবার (৩১ আগস্ট) সকালে সমাপনী অধিবেশনসহ সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যও রাখেন তিনি।
বিমসটেকের চতুর্থ এই শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুক, শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান-ও-চার ও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেওয়া ছাড়াও সাইডলাইনে অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার একটি যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই উপআঞ্চলিক সংস্থাটি গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পাঁচটি দক্ষিণ এশিয়ার— বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা। অন্য দু’টি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।
আরও পড়ুন-
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শুরু
সারাবাংলা/এটি/একে/টিআর