বিজ্ঞাপন

ফার্মের কর্মীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যা বললেন সাকিব

April 22, 2020 | 1:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। যার বাইরে নেই বাংলাদেশও। করোনাকালে স্থবির অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ঠিক এমন পরিস্থিতে দেশের সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। চার মাস কর্মচারীদের বেতন দেননি বলে বকেয়া বেতনের দাবীতে গত পরশু রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাসুদ মোড়ে গড়ে ওঠা সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের প্রায় দুই শতাধিক কর্মী।

বিজ্ঞাপন

                              আরও পড়ুন: বেতন না পেয়ে আন্দোলনে সাকিব অ্যাগ্রো ফার্মের ২ শতাধিক শ্রমিক

সেদিন ফার্মের শ্রমিক মহিদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘চার মাস ধরে আমাদের কোনো বেতন দেওয়া হয় না। করোনা প্রাদুর্ভাবে কঠিন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।’

একই অভিযোগ শোনা গেছে নারী শ্রমিক রহিমা বেগমের কণ্ঠেও। ‘অভাবের তাড়নায় সন্তান ও পরিবার ফেলে এসে প্রজেক্টে কাজ করেছি। ঠিকমতো বেতন না পাওয়ায় করোনা প্রাদুর্ভাবে খুবই কষ্টে আছি।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বুধবার (২১ এপ্রিল) নিজের ফেইসবুক পেইজে এসব দোষ অস্বীকার করেছেন নিষিদ্ধ এই টাইগার ক্রিকেটার। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের খবর প্রকাশ করায় গণমাধ্যমকেও দোষারোপ করেছেন তিনি।

সারাবাংলা ডটনেটের পাঠকদের জন্য সাকিবের ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

বিজ্ঞাপন

বিগত কয়েক দিনে অ্যাগ্রো ফার্মে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমার বিলম্বিত বক্তব্যের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সব তথ্য ঠিকমত যাচাই-বাছাই করে সত্যটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি বলেই এই বিলম্ব। যদিও  অ্যাগ্রো ফার্মের সাথে আমার নাম সরাসরি যুক্ত। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে আমার অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মতো এই কোম্পানিটিও অন্যান্য মালিক/অংশীদারদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে।

বেশিরভাগ সময়েই আমার জন্য ব্যবসার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড তদারকি বা সরাসরি অফিস পরিদর্শন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনারা সবাই জানেন, এ বছরের শুরু থেকে আমি আমেরিকায় অবস্থান করছি আমার পরিবারের সাথে। পরিবারের নতুন অতিথি অগমনের অপেক্ষায়। এই সময়ের মধ্যে অ্যাগ্রো ফার্মের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা আমার জানা ছিল না এবং শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারটি আমি মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারি। অন্যান্য মালিকেরা এক্ষেত্রে আমাকে বিগত কয়েক মাসের সকল তথ্য যথাযথভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে অবহিত করেছে, কিছু সংখ্যক কর্মচারী যারা কর্মরত ছিল তাদের বেতন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য যে, এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষেই প্রায় সব কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কর্মচারীরা হঠাৎ রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় ধারণা করা যায়, কারও গোপন এবং কু-প্ররোচনাতেই এমনটি হয়েছে।

তবে যখনই আমি বুঝতে পারি যে, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তখনই আমি কোম্পানি এবং বাকি অংশীদারদের সাহায্য ছাড়াই আমার নিজের তহবিল থেকে তাৎক্ষণিক বকেয়া বেতন পরিশোধ করি। আমি বিশ্বাস করি এটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং এটা নিজেদের মধ্যেই রাখা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি এটা দেখে যে, কর্মচারীরা মাসের শেষে বেতন নিতে সম্মতি জানিয়েও তারা আন্দোলনে অংশ নিলো!

অনেকের মত আমিও এই মহামারী মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহ করে আমার কর্মচারীদের মতই অন্যান্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি এটা বুঝে উঠতে পারছি না মানুষ কেন ভাবছে, আমি আমার কর্মচারীদের বঞ্চিত করব, যাদের আমি গত ৩ বছর ধরে বেতন দিয়ে আসছি।

বিজ্ঞাপন

আমি সত্যিই মর্মাহত যে, মিডিয়া ব্যাপারটির সত্যতা যাচাই না করেই আংশিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে। আংশিক মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক সংবেদনশীল শিরোনামগুলোর চেয়ে তাদের সত্যতা যাচাই করে নেওয়াই উচিত ছিলো।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সত্য অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য মানুষকে জানানো মিডিয়ার বড় দায়িত্ব। তা না হলে অযথাই আমার মতো অনেক মানুষই এ ধরনের খবরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা শুধুমাত্র আমাকে দোষারোপ না করে পুরো ব্যাপারটি সকল অংশীদারের নামসহ সবার সামনে তুলে ধরতে পারতো। শুধু আমি না, কেউই এধরনের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাশা করে না। আশা করি মিডিয়া এবং সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সংবাদ সকলের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হবেন।

আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, বর্তমান সংকটকে সামনে রেখে আমাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা প্রয়োজন। এবং যেকোনো ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য, গুজব এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সজাগ ও সোচ্চার হওয়া দরকার। আমি মনে করি এখন অন্যান্য যেসব অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে সেদিকেই আমাদের মনোযোগটা বেশি দেওয়া উচিত।

সবাই দয়া করে বাসায় থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন