বিজ্ঞাপন

রফতানি আয় বাড়ার প্রবণতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় গত অর্থবছর

July 7, 2020 | 7:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের রফতানি আয়ের জন্য ভালো যায়নি সদ্য শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছর। বেশিরভাগ সময় ধরে রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। করোনার ধাক্কায় সেই নেতিবাচকতা আরও প্রকট হয়েছিল। তবে বছরের শেষ দিকে এসে রফতানি আয় কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরটিতে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

এতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। তবে মে মাসের তুলনায় জুন মাসে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে দেশের রফতানি আয়। সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এবার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সে হিসেবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

এদিকে, একক মাস হিসেবে জুনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। মে মাসে এই রফতানির পরিমাণ ছিল ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার। গেল এপ্রিলে রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫২ কোটি ডলার। এপ্রিলের তুলনায় জুন মাসে পণ্য রফতানি আয় প্রায় পাঁচ গুণ বাড়লেও তা গত অর্থবছরের জুন মাসের চেয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কম।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী মঙ্গলবার (৭ ‍জুলাই) বিকালে সারাবাংলাকে বলেন, ‘অর্থবছরটির শেষ দিকে রফতানি আয় বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এটি একটি পজেটিভ মেসেজ। আমাদের দেশের জন্য সুখবর। তবে এই সময়টিতে বেশি রফতানি হবে তা আগে থেকেই জানা ছিল। কারণ সব শেষ দুটি মাসে আমরা রফতানি করতে পারিনি। যে কাজগুলো হয়েছিল তা পরে রফতানি হওয়ায় আয় বাড়তির দিকে রয়েছে। আগামী মাসগুলোতে রফতানি আয় বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

তিনি বলেন, ভালো বিষয় হচ্ছে শ্রমিকরা এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছে। কিন্তু সামনে ঈদুল আজাহা। জুলাই-আগস্টেই সারা পৃথিবীতে পোশাকের কার্যাদেশ কম থাকে। সেক্ষেত্রে এটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক বায়ারগুলোর কাছে এখন পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তারা গুডস চাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা এখন একটি ভিন্ন রকম পরিস্থিরি মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের পোশাকের দর ধরে রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পোশাকের দরপতন হচ্ছে। ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া কর্মসংস্থান এখন হুমকির মুখে। এই মুহূর্তে দেশের দক্ষ শ্রমিকদের খাতটিতে ধরে রাখতে হবে। আর যারা নতুন করে আসতে চাচ্ছে তাদেরকে কিভাবে প্রোভাইড করা যাবে তাতেও আমাদের নজর থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৯১ লাখ (২৭.৯৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রফতানি আয়ের ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে পোশাক রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় শুধু পোশাকেই ১০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় কম হয়েছে। গত অর্থবছরে নিট পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৪০৪ কোটি ১১ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের মহামারির এই সময়টিতে এবার বড় অঙ্কের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়েই শেষ হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি। গত অর্থবছরে এ খাতের রফতানি আয় কমেছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। আগের বছরে আয় হয়েছিল ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। লক্ষ্য ধরা ছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ ৩৩ কোটি ২৬ ডলার আয় করেছে। রফতানির এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। এ খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৩৬ কোটি ১১ লাখ ডলার।

করোনা ভাইরাসের কারণে ধস নেমেছে কৃষি পণ্য রফতানিতেও। বিভিন্ন কৃষি পণ্য রফতানি করে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে মহামারিতেও আশা দেখাচ্ছে পাট পণ্য রফতানি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮১ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ওষুধ রফতানিতে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে প্রায় ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন