বিজ্ঞাপন

১২ ঘণ্টা না যেতেই গুঁড়িয়ে গেল ‘অননুমোদিত’ আবরার স্মৃতিস্তম্ভ

October 8, 2020 | 1:10 am

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী প্রয়াত আবরার ফাহাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি ২৪ ঘণ্টাও টেকেনি। সকালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর রাতেই স্মৃতিস্তম্ভটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটি বলছে, অনুমতি না নিয়ে নির্মাণের কারণে ‘দুর্ঘটনার ঝুঁকি’ বাড়াতে পারে বিবেচনায় সেটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সতীর্থ ছাত্রলীগকর্মীদের মারধরের শিকার হয়ে নিহত আবরার হত্যাকাণ্ডের একবছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর)। এই দিনটিতেই আবরারের স্মৃতি ধরে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে পলাশী মোড়ে তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার (৭ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত টানা কাজ করে স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করা হয়। তবে বুধবার রাতেই স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

শুরুতে জানা যায়, পুলিশ বুলডোজার এনে স্তম্ভটি ভেঙে দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশ সেখানে কিছু করেনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি টিম রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে গিয়ে স্তম্ভটি ভেঙে দিয়ে এসেছে। এখানে পুলিশের কিছু বলার নেই।

স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার তথ্যটি স্বীকার করে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। অনুমতি না থাকার কারণেই সেটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের।

বিজ্ঞাপন

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘(স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার) তথ্যটি সঠিক। কারণ তারা সিটি করপোরেশনের পারমিশন নেননি। পাবলিক প্লেসে ভাস্কর্য করার নিয়ম আছে। উনারা সেটা মানেননি।

আবু নাছের আরও বলেন, প্রকৌশলগত দিক থেকে বিবেচনা করলেও এ ধরনের ‘রাউন্ডঅ্যাবাউট’ ভাস্কর্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের ভাস্কর্য নির্মাণ করলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণে যুক্ত এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, আবরারের স্মৃতি ও চেতনা সমুন্নত রাখতে তারা এই আট স্তম্ভের প্রতীকী শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন। এগুলো হলো— সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও আগ্রাসন নির্মূল। এরকম একটি স্তম্ভ তৈরির পর ভেঙে দেওয়া দুঃখজনক— মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি জানান এটি নির্মাণের উদ্যোক্তা ডাকসুর সদ্য সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়টির তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজও শুরু করেছেন। আবরারের বাবা আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/এসএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন