বিজ্ঞাপন

কলকাতায় ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ গিয়েও শেষ রক্ষা হল না তুষার-এখলাছের

June 26, 2018 | 3:41 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে খুন করে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকায় ঘনিষ্ঠ নেতাদের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে থাকতে চেয়েছিলেন যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ মহিনউদ্দিন তুষার (৩০) ও তার সহযোগী এখলাসুর রহমান এখলাছ (২২)। সেখানে ব্যর্থ হয়ে ভারতের কলকাতাকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবেছিল তারা। কিন্তু কলকাতাও তাদের জন্য নিরাপদ হল না। দুই দেশের পুলিশের কৌশলের কাছে হার মেনে গ্রেফতার হয়ে তাদের ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশে।

তবে অপরাধ সংঘটনের পর বিদেশে পালিয়ে যাওয়া কোনও আসামিকে ইন্টারপোলের সাহায্য ছাড়া এত দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার নজির নেই বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তবে অপরাধের পর এত দ্রুত অপরাধীদের সীমান্ত পার হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৬ জুন) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার মো.মাহবুবর রহমান বলেন, ‘তুষারের ভারত ও মালয়েশিয়ার ভিসা ছিল। এখলাছের শুধু ভারতের ভিসা ছিল। তারা দুজন যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান। তবে বিভিন্ন জটিলতা এড়িয়ে দাফতরিক প্রক্রিয়ায় আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

গত ১৭ জুন চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে আবু জাফর অনিককে (২৬) খুনের মামলার প্রধান আসামি তুষার। একই মামলার ১০ নম্বর আসামি এখলাছ। এছাড়া মামলার ৪ ও ৫ নম্বর আসামি দুই ভাই জোনায়েদ আহম্মদ ইমন (১৯) ও জোবায়েদ আহম্মদ শোভনকে (২২) পুলিশ কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করেছে।

সিএমপি সূত্র মতে, নগরীর দামপাড়ায় অনিককে ছুরিকাঘাতের পর তুষারের নেতৃত্বে ঘটনায় জড়িতরা সেখান থেকে পালিয়ে জামালখানে চলে যান। তাদের ধারণা ছিল, এলাকায় তাদের উপর বড় ধরনের হামলা হতে পারে। সেই হামলা প্রতিরোধের জন্য যুবলীগ নেতা তুষার জামালখানে তার রাজনৈতিক সতীর্থদের কাছে সহযোগিতা চাইতে এসেছিলেন। জামালখান থেকে আরও তরুণ-যুবক এবং অস্ত্র সংগ্রহ করে তারপর এলাকায় প্রবেশের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু জামালখানে থাকা অবস্থায় তাদের কাছে খবর আসে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনিক মারা গেছে। এরপর সবাই যার যার মোবাইল বন্ধ করে জামালখান থেকে পালিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

তুষার ও এখলাছ পরস্পরের ঘনিষ্ঠ। তারা ওই রাতেই ৯ হাজার টাকায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় চলে যান। ঢাকার যাত্রাবাড়ি, খিলগাঁও এবং উত্তরায় গিয়ে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ নেতার কাছে আশ্রয় চান। তবে কেউই তাদের আশ্রয় দিতে সম্মত হননি।

১৯ জুন সকালে দুজন ঢাকা থেকে বাসে করে কলকাতার উদ্দেশে যশোরে রওনা দেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় তারা যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভারতে চলে যান।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে জানান, অনিক হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক কোনও বিষয় ছিল না। পাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকারী একেবারে উঠতি বয়সী তরুণদের রেষারেষি থেকে বড়রা মিলে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ঘটনার পর আসামিরা দামপাড়া থেকে গিয়ে জামালখানে অবস্থান নেয়। সেই জামালখানেই ঘটনায় জড়িত সবার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নেমেই আমরা তুষার ও এখলাছের বিষয়ে তথ্য পাই।

‘তুষার ও এখলাছ ভেবেছিল, ভারতে পৌঁছাতে পারলেই তারা নিরাপদ। তাদের আর বাংলাদেশের পুলিশ ধরতে পারবে না। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা হয়ত দেশে ফিরবে। কিন্তু তাদের আমরা এত তাড়াতাড়ি ধরতে পারব, সেটা তারা বুঝতে পারেনি।’ বলেন রউফ।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, তুষার ও এখলাছ কলকাতায় আছে এমন তথ্য পাবার পর আমরা দ্রুত কলকাতা পুলিশের কাছে তাদের আটক করে ভিসা বাতিলের ব্যবস্থা করার জন্য চিঠি দিই। আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তারা ভিসা বাতিল করে। ২৪ জুন তাদের কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স ফ্রি স্কুল স্ট্রিট থেকে আটক করে। এরপর তাদের বেনাপোল স্থলসীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরত পাঠালে আমরা তাদের আটক করি। এই প্রক্রিয়াটা যদি ইন্টারপোলের মাধ্যমে করতাম, তাহলে অনেক সময় লেগে যেত।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের ছুটির শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমরা সব সীমান্তপথে অ্যালার্ট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সীমান্ত স্টেশনে দাফতরিক প্রক্রিয়া শেষ হতে একটু সময় লেগে যায়। এর ফাঁকে তুষার ও এখলাছ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

গত ১৭ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর চকবাজার থানার দামপাড়া ব্যাটারি গলির মুখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো.নাছিরের ছেলে অনিক খুন হন। তাদের বাসাও নগরীর দামপাড়া পল্টন রোডে।

১৮ জুন নাছির বাদী হয়ে ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিএম

আরও পড়ুন

অনিক খুনের দুই আসামি কলকাতায় গ্রেফতার, রাতে আনা হচ্ছে
অনিক হত্যা মামলায় ২ ভাই গ্রেফতার

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন