বিজ্ঞাপন

“ছুটি ডট কম একটা স্বপ্নের নাম”

February 1, 2018 | 6:02 pm

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমনসংক্রান্ত সব সুযোগ সুবিধা একসাথে নিয়ে ২০১৫ তে যাত্রা শুরু করে অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্সি ছুটি ডট কম। দেশের মানুষের চাহিদা বুঝে সেই অনুযায়ী ভ্রমন সংশ্লিষ্ট সব ধরণের সেবা দিয়ে থাকে তারা। মানুষকে আরো ভ্রমণমুখী করার সঙ্গে দেশের পর্যটেন শিল্পের বিকাশে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে পর্যটন যেন এদেশের মানুষের জীবনযাপনের অংশ হয়ে ওঠে, সেটি গড়ে তোলাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা মুখোমুখি হয়েছিল ছুটি ডট কমের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক এম এ মারুফের। তার সাথে কথপোকথনে উঠে আসে এদেশের পর্যটন নিয়ে তাদের ভাবনার নানা দিক ও স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজনীন ফারজানা।

সারাবাংলাঃ ছুটি ডট কম শুরু করার কথা মাথায় এল কীভাবে আর কেন?

এম এ মারুফঃ সারা পৃথিবীতেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনেও কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রায় বছর দশেকের মাঝে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের দেশে বিদেশে ছুটি কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে। দৈনন্দিন জীবনের নিত্য তাড়াহুড়া এবং ছুটাছুটি থেকে মুক্তি পেতে মানুষ যেন কিছুটা সময়ের জন্য ছুটি কাটিয়ে আসতে পারে সেই সুযোগ দিতেই ছুটি ডট কমের যাত্রা শুরু।

বিজ্ঞাপন

 

এম এ মারুফ

 

সারাবাংলাঃ ২০১৫ তে আপনাদের যাত্রা শুরু বাংলাদেশের মানুষের জীবন বদলে দিতে। ঠিক কীভাবে জীবন বদলে দেবে সে সম্পর্কে আমাদের যদি ধারণা দিতেন।

বিজ্ঞাপন

এম এ মারুফঃ আগেই বলেছি মানুষের জীবনে এখন প্রচুর ব্যস্ততা। অল্প কিছুদিনের অবকাশ যাপন মানুষের চিত্তকে শিথিল করে, তাকে উদ্বেগমুক্ত হতে সাহায্য করে। এজন্যই কিন্তু আমাদের দেশে আগে মানুষ গরমের ছুটি কিংবা সন্তানের স্কুল ছুটির সময়টাতে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ঘুরতে যেত। আর এখন দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা দেখতে যায়। আমরা ছুটি কাটানোর সুযোগ করে দিতে সাহায্য করছি মাত্র। ব্যপারটা আসলে আমাদের জন্য কিছুটা ফিলোসফিক্যাল। অতি ব্যস্ত জীবনযাপন থেকে অল্প কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে সাহায্য করে আমরা তাদের জীবনে বদল আনতে সাহায্য করছি এতেই আমাদের তৃপ্তি আর এটাই আমাদের কাজের উদ্দেশ্য।

সারাবাংলাঃ Transformation of an emerging traditional sector into a digital platform by innovating means that are not used before- আপনাদের ওয়েবসােইটে প্রতিষ্ঠানের পরিচিতিতে উল্লিখিত এই কথাটি সম্পর্কে ধারণা দিতেন যদি-

এম এ মারুফঃ আমাদের দেশে পর্যটনের পুরো সেক্টরটাই ট্র্যাডিশনাল নিয়মে চলে। আগে দেখা যেত কেউ কোথাও ঘুরতে গেলে আগে হোটেলে ফোন দিয়ে দরদাম ঠিক করত। তারপর সেখানে গিয়ে এয়ারপোর্টে বা বাস স্টপেজে পৌঁছেই গাড়ি ঠিক করতে হত। সেসব গাড়িতে হয়ত এসি থাকতনা বা থাকলেও ড্রাইভার এসি ছাড়তে রাজি হত না। তারপর খোঁজা শুরু হয়ত কোথায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই ছুটি ডট কমের যাত্রা শুরু। আমরা নতুনত্ব এখানেই এনেছি যে, ভ্রমণ সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান এক জায়গায় জড়ো করেছি। যানবাহনের টিকেট কাটা থেকে শুরু করে হোটেল ঠিক করা, গন্তব্যে গিয়ে গাড়ি যেন ঠিকমত পায় সেটা নিশ্চিত করা, খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা, কোথায় ঘুরবে না ঘুরবে সেটা ঠিক করা- সব সেবা একসাথে দিচ্ছি। আর পুরোটাই অনলাইনভিত্তিক। এখানেই আমাদের নতুনত্ব।

 

বিজ্ঞাপন

 

সারাবাংলাঃ শুরুতেই ভ্রমনপিপাসুদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেয়েছিলেন? এখনকার পরিস্থিতিই বা কি?

এম এ মারুফঃ আমরা যখন এই প্রতিষ্ঠান শুরু করিনি তারও বহু আগে থেকেই আমরা ঘুরে বেড়াতাম। দেশের এমন সব জায়গায় আমরা যেতাম যেখানে আগে কেউ যায়নি। আমাদের মাঝে অনেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সেসব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখত। অনেকেই নতুন কোথাও ঘুরতে গেলে ট্যুর গাইডের সাহায্য না নিয়ে সেসব পেপার কাটিং এর সাহায্য নিত। নিজেদের সেসব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ছুটি ডট কম যখন শুরু করে তখন থেকেই সবার কাছ থেকে  ভালো সাড়া পেতে শুরু করে। সর্বদা আমাদের চেষ্টা থাকে মানুষের ছুটিটা যেন নিরবচ্ছিন্ন হয় সেটা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের গ্রাহকদের সাথে আন্তরিক ও উষ্ম ব্যবহার করতে। সেই আন্তরিকতাটাই হয়ত অনেককে ছুঁয়ে যায় আর তাই পুরনো গ্রাহকেরা বার বার ফিরে আসে আর নতুন গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সারাবাংলাঃ আপনাদের যারা ক্লায়েন্ট তারা কোথায় ঘুরতে পছন্দ করে, দেশে নাকি বিদেশে?

এম এ মারুফঃ কথা হচ্ছে মানুষ ঘুরতে পছন্দ করে, দেশে হোক কি বিদেশে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মানুষ শীতকালে দেশের ভেতরেই ঘোরে বেশি। আর বাদবাকি সময় দেশের বাইরে যেতে পছন্দ করে। যেমন গরমের দিনে ভ্রমণপিপাসুরা ঠান্ডাপ্রধান দেশে যায়।

সারাবাংলাঃ দেশের মাঝে কোন কোন পর্যটনকেন্দ্র বেশি জনপ্রিয়?

এম এ মারুফঃ দেশের ভেতরে মানুষ জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে যেতেই পছন্দ করে। কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবন, সিলেট, শ্রীমঙ্গল এসব জায়গাতেই যেতে চায় বেশি।

সারাবাংলাঃ দেশের বাইরে কোন কোন জায়গায় ঘুরতে পছন্দ করছে মানুষ?

এম এ মারুফঃ এখন আসলে আমাদের দেশে একটা শ্রেণি আছে যারা কয়েকবার করে ভারত, নেপাল, ভূটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছে। তারা এখন বালি, তুরস্ক, দুবাই, চায়না, ব্রাজিল, ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি আফ্রিকার নানা দেশে ঘুরতে যেতে চায়।

সারাবাংলাঃ মধ্যবিত্ত নাকি উচ্চবিত্ত কারা বেশি ভ্রমনে আগ্রহী?

এম এ মারুফঃ আসলে সব অর্থনৈতিক শ্রেণির লোকই ঘুরতে পছন্দ করে আজকাল। যার বেশি টাকা নাই সেও দেখা যায় ছুটির দিনে হাতির ঝিল, তিনশো ফিট কিংবা দিয়াবাড়ির মত জায়গায় বেড়ায় । যাদের হাতে একটু টাকা পয়সা আছে তারা দেশের ভেতরে ঘোরার পাশাপাশি দেশের বাইরেও যায়।

সারাবাংলাঃ তরুণদের মাঝে পর্যটনের ব্যপারে আগ্রহ কেমন?

এম এ মারুফঃ আসলে তরুণ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বয়সে তরুণরাই শুধু না, যারা মনের দিকে তরুণ তারা দেশ, বিদেশে ভ্রমণের ব্যাপারে দারুণ আগ্রহী। আমাদের অনেক ক্লায়েন্ট আছে যারা পঞ্চাশোর্দ্ধ নারী, তারা নিয়মিত নানা ট্যুরে যায়। তাই বলব এখন সব বয়সী নারী পুরুষই ভ্রমণ পছন্দ করে।

সারাবাংলাঃ দেশে এখন একক বা দলবদ্ধ নারী পর্যটক কি বেড়েছে? কি মনে হয় আপনাদের?

এম এ মারুফঃ হ্যা অবশ্যই বেড়েছে। আমাদের কাছে এমন নারী ক্লায়েন্ট প্রায়ই আসে যারা এককভাবে ও দলগতভাবে দেশে এবং বিদেশে ভ্রমণে যেতে চায়।

সারাবাংলাঃ নারী ট্রাভেলারদের জন্য যেহেতু নিরাপত্তার পরিস্থিতি মাথায় রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা কি থাকে আপনাদের?

এম এ মারুফঃ নারী ক্লায়েন্টদের জন্য প্রাইভেসি আর নিরাপত্তা এই দুটো বিষয় মাথায় রেখে আমরা ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাই। এ কারণে আমাদের নারী ক্লায়েন্টরা দেখা যায় বার বার ফিরে আসে।

 

 

সারাবাংলাঃ ট্রাভেল এজেন্সি শুরু করতে কি ধরণের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বা এখনো হন।

এম এ মারুফঃ বাংলাদেশে পর্যটনখাত ফুলেফেপে উঠলেও অবকাঠামোগত বাধা তেমন দূর হয়নি। তাছাড়া সফটওয়্যার বা প্রযুক্তিগত ভাবেও আমাদের দেশে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দেখা যায়, এজেন্সি হিসেবে আমরা আন্তরিকতাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কিন্তু যেখানে আমাদের ক্লায়েন্টরা যাচ্ছে সেখানে সমান দক্ষ আর পেশাদারি লোক পাওয়া মুশকিল। তবে সবচাইতে বড় বাঁধার সম্মুখীন যেটা হই তা হল, অর্থনৈতিক সমস্যা। স্টার্ট আপ কোম্পানি হিসেবে ব্যাংক থেকে লোন পেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।

সারাবাংলাঃ মানুষ ছুটি ডট কম কে কেন বেছে নেবে? আপনাদের বিশেষত্ব কি? আপনারা কি ধরণের সুযোগ সুবিধা দেন।

এম এ মারুফঃ কোথাও ছুটি কাটাতে গেলে কোন ব্যক্তির যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু নিয়ে ছুটি ডট কম আসলে একটা ওয়ান স্টপ ট্রাভেল সার্ভিস। আমরা টিকেট, যানবাহন, থাকার জায়গা, খাবারদাবার, আনন্দভ্রমণ আর বিদেশে যেতে চাইলে ভিসা- এই সবকিছুর সুবিধা একই ছাদের নিচে দিচ্ছি।

সারাবাংলাঃ বাংলাদেশে পর্যটনের ভবিষ্যৎ কি?

এম এ মারুফঃ বাংলাদেশের পর্যটনে আগ্রহী লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল বলে মনে করি আমি।

সারাবাংলাঃ নতুন যারা শুরু করতে চায় তাদের জন্য কি পরামর্শ দেবেন।

এম এ মারুফঃ শুরুতেই বলব, প্রচুর প্যাশন নিয়ে কাজটা শুরু করতে হবে। টাকা তো দরকারই যেহেতু লোন পাওয়া তেমন সহজ নয়। তাই দরকার একটানা লেগে থাকার প্রবণতা। দীর্ঘসময় টিকে থাকতে এছাড়া দরকার রিসার্স বা ভালো মত খোঁজখবর নিয়ে তারপর ট্রাভেল এজেন্সি শুরু করা।

সারাবাংলাঃ শেষ প্রশ্ন, ছুটি ডট কম কে নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কি?

এম এ মারুফঃ আসলে ছুটি ডট কম একটা স্বপ্নের নাম। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের স্বপ্নের পরিধি অনেক ব্যাপক। আমরা চাই আমাদের এই প্রতিষ্ঠান যেন মানুষের লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রার অংশ হতে পারে। যেমন, আমরা কোন এক দল প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুর জন্য শহরের কোলাহলের বাইরে গিয়ে চাঁদ দেখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এরকম নানা আয়োজন নিয়ে এগিয়ে চলার ইচ্ছা আমাদের।

 

সারাবাংলা/আরএফ/এসএস

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন