বিজ্ঞাপন

আইসিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে এটুআই— শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

May 25, 2022 | 10:59 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকার এটুআই প্রকল্পকে এজেন্সি টু ইনোভেশন (এটুআই) হিসেবে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে দেওয়া হয়েছে। তবে এটুআইকে এজেন্সিতে রূপান্তরের এই উদ্যোগে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পাঁচ সংগঠন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার পর সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথাও রয়েছে। তবে বৈঠক ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে খসড়ায় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না— তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলো বলছে, এটুআইকে এজেন্সি করা হলে বিভিন্ন প্রকল্পে তারা নিজেরাই কাজ করতে পারবে। নিজেই সেবাদাতা ও পরামর্শক হিসাবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে এটুআই। যেহেতু সংস্থাটি দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে পরামর্শক হিসাবে কাজ করে আসছে, তারা সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গেলে তা পাবলিক প্রকিউরমেন্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।

এটুআইকে এজেন্সি করার এই উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে লেখা চিঠিতে সই করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধারা-উপধারার বিষয়ে পর্যবেক্ষণও জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারের ‘অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট’কে (এটুআই) ‘এজেন্সি টু ইনোভেশন’ করার একটি আইনি খসড়ায় গত মার্চে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে এই খসড়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলো বলছে, এটুআই সরাসরি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের বিকাশমান গতি ব্যাহত হবে। একইসঙ্গে এটুআই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞাপন

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পাঁচটি সংগঠন চিঠিতে জানিয়েছে, খসড়াটি অনুমোদনের আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। তারা উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার পর আইসিটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এজেন্সি টু ইনোভেশন (এটুআই) নামে একটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা এবং আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিধান প্রণয়ণ করতে একটি আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। খসড়া আইনে বেশকিছু ধারা ও উপধারা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বেসরকারি খাতের মূল কর্মকাণ্ড অর্থাৎ ব্যবসার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অনেকগুলো ধারা ও উপধারা অস্পষ্ট থাকার কারণে বিভ্রান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

চিঠিতে বিভিন্ন ধারা-উপধারা উল্লেখ করে ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিষয়ে সেবা ও পরামর্শ প্রদান’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি ও দাতা সংস্থার সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিনের, যেন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। সেখানে খসড়ার ৫(ট) ধারায় উল্লেখিত প্রস্তাবে প্রতীয়মান হচ্ছে, এটুআই নিজেই সেবাদাতা ও পরামর্শক হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞাপন

আইনের উদ্দেশ্য পূরণে কোম্পানি গঠন বা অন্য কোনোন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়েছে, এজেন্সি নিজেই যদি কোম্পানি গঠন করে, তাহলে তা সরাসরি দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একটি শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবেই প্রতিভাত হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তাপুষ্ট এবং অন্য দশটি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারের সব ক্রয় কার্যক্রমে একচেটিয়া অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশীয় প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর ব্যবসার সুযোগ অনেকাংশেই বিনষ্ট করবে। ফলে সরকারে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিশের যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা মূলত পাবলিক-পাবলিক পার্টনারশিপে রূপ নেবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, শুরু থেকে এটুআই সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য পরামর্শ ও আইডিয়া প্রদান, সহযোগিতা এবং প্রজেক্ট তৈরি করে আসছে। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে সরকারের হয়ে কাজ করে আসছে। এখন নিজেই কোম্পানি করে সেই প্রজেক্ট নিজেই বাস্তবায়ন করতে অথবা অংশীদার বা মালিক হয়ে বাস্তবায়ন/ব্যবসায়িক কার্যক্রম করলে ১০০ শতাংশ আইন ও পাবলিক প্রকিউরমেন্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্কো এবং ই-ক্যাবসহ ট্রেডবডির এই দায়িত্ব দেশি বা বিদেশি ব্যক্তি বা সংস্থাকে নিয়ে এই কার্যক্রম করে আসছে এবং এটি ট্রেডবডির কাজ।

প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী এটুআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনে যেকোনো সভায় দেশি বা বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এই ধারার স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন উল্লেখ করে চিঠিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলো বলছে, বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্কো এবং ই-ক্যাবই যথেষ্ট। খসড়ায় বলা হয়েছে, এজেন্সি বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাওয়া অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করতে পারবে। বিষয়টি আইন দ্বারা সীমিত করা না গেলে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে বলেও মনে করছে পাঁচ সংগঠন।

জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, খসড়াটি নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা আরেকটি বৈঠকের অপেক্ষায় আছি। এরই মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকটি আইসিটি প্রতমন্ত্রীর সভাপতিত্বে হবে।

বিজ্ঞাপন

বেসিস সভাপতি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে— মন্ত্রিসভার বৈঠকে থেকে যে প্রাথমিক খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতবান্ধব নয়। এর অনেকগুলো ধারা এই শিল্প খাতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একটি নীতিমালা তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট খাতের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়, মতামত নিতে হয়; যেটি আগে হওয়ার দরকার থাকলেও হয়নি, এখন হচ্ছে। আমরা এখন পরবর্তী বৈঠকের অপেক্ষায় আছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি। আমরা আইসিটি বিভাগের সঙ্গে বসেছি। তারা আমাদের বক্তব্য নিয়েছে। এজেন্সি বা কোম্পানি করার যে উদ্যোগ, সেখানে উদ্বেগের অনেক কিছুই আছে। কিন্তু পুরো বিষয়টিই এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে।

একই বিষয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আমাদের আপত্তির কথাগুলো আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে জানিয়েছি। আমরা এখন (বৈঠকের জন্য) প্রতিমন্ত্রীর সময়ের অপেক্ষায় রয়েছি।

জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম সারাবাংলাকে বলেন, খসড়াটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। আইসিটি খাতের সংগঠনগুলো আপত্তি তোলায় আমরা তাদের বক্তব্য নিয়েছি। তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আরেকবার তাদের সঙ্গে আমরা বসব।

এক প্রশ্নের উত্তরে আইসিটি সচিব বলেন, খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সময়ই সব বলে দেবে। তার আগে আরও অলোচনা হবে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকে দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন