বিজ্ঞাপন

আমরা যা করি স্বচ্ছতার সঙ্গে করি: র‌্যাবের বিদায়ী ডিজি

September 28, 2022 | 6:20 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, আইন যে ক্ষমতা র‌্যাবকে দিয়েছে, তার ভেতরেই সদস্যরা কাজ করেন। এক্ষেত্রে র‌্যাব আইনি সীমা অতিক্রম করে না। র‌্যাব যা করে তা স্বচ্ছতার সঙ্গেই করে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব নিতে যাওয়ার আগে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে আসেন মামুন।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যখনই অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন কিন্তু আমরা (র‌্যাব) থাকি না। প্রথমে থানা পুলিশ আসে। ম্যাজিস্ট্রেট আসে। সুরতহাল হয়। মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। থানায় মামলা হয়। ওপেন কোর্টে বিচার হয়। দুই পক্ষের বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেয়।’

‘এসবের মধ্যে র‌্যাবের কোনো ভূমিকা থাকে না। সরকার গণমাধ্যম এসব মনিটরিং করে। এখানে র‌্যাবের কতোটুকু ভূমিকা আছে সেটা আমারো প্রশ্ন। আমরা যা করি স্বচ্ছতার সঙ্গে করি। যেখানে প্রয়োজন, কেবল সেখানেই শক্তি প্রয়োগ করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নিষেধাজ্ঞার কারণেই ইদানিং র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে কিনা। জবাবে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে র‌্যাবের নেতৃত্ব দিয়ে আসা মামুন বলেন, ‘না আমরা তা মনে করি না।’

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত ডিসেম্বরে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতর। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক পুলিশের বিদায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিলেন।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীরা যে কত কুখ্যাত, তাদের সামনে যা আসে, সব বাধা উপেক্ষা করে তারা অপরাধ সংঘটিত করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অপরাধ সংঘটিত করতে চায়।’

বিজ্ঞাপন

প্রায় আড়াই বছর র‌্যাবের দায়িত্ব সামলানো এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযানে তাদের সমস্যরাও আহত হন, প্রাণহানি-অঙ্গহানিও ঘটে। যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসা আমরা করেছি। আমাদের দায়িত্ব চ্যালেঞ্জিং, যে কারণে আমার অনেক সহকর্মীর চাকরি পর্যন্ত হারায়। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতেও র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।’

মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছিল বিদায়ী ডিজির কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেবল র‌্যাবের নয়, কেবল বাংলাদেশেরও নয়; বিশ্বজুড়েই এ যুদ্ধ চলছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজের কারণে কারাগারে যেসব আসামি, তার বেশিরভাগই মাদকের। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর যেখানেই মাদক, সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু র‌্যাব নয়, সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ধরছে।’

তিনি বলেন, ‘মাদকের বিস্তার বন্ধে সচেতনতা দরকার সবার ঘর থেকেই। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি মনে করি, অতীতে যেমন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি, তেমনি অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মহামারির সময়টিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনা আক্রান্ত র‌্যাব সদস্যদের ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা, সুচিকিৎসা ও তদারকির জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়। পর্যাপ্ত সুবিধা সম্মিলিত হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, পর্যাপ্ত আইসিইউ স্থাপন, ভেন্টিলেটর, সার্বক্ষণিক নার্স ও চিকিৎসকদের সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এই জন্যেই অর্ধেকের বেশি র‌্যাব সদস্য করোনা আক্রান্ত হলেও ক্যাজুয়াল্টির সংখ্যা ছিল খুবই অল্প। এছাড়াও, মহামারীর সময়টিতে র‌্যাব ফোর্সেস দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত সদস্যকে ছেড়ে চলে গেলেও র‌্যাব সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদেরকে র‌্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নিয়ে এসে রাজধানীতে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে র‌্যাব। করোনা পীড়িত সময়ে অচিন্তনীয় ঘরবন্দি অবরুদ্ধতার সময়টিতে সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মনোভাবের মাধ্যমেই অতীতের ক্ষিপ্রতায় উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকের বিস্তার নিরসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করে র‌্যাব।’

র‌্যাবের বিদায়ী ডিজি বলেন, ‘করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভীতিকর এক পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য খাতের অপরাধীদের দুর্গে হানা দিয়েছিল র‌্যাব। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ প্রদান, অর্থের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা এবং করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদকে গ্রেফতার ছিল করোনাকালীন সময়ে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন। এছাড়াও করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নিরসনে বর্তমানে বিশ্বের বুকে রোল মডেল। র‌্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে কাজ করে যাচ্ছে। র‌্যাব ফোর্সেস এর দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। দায়িত্বকালীন প্রায় ৮ শতাধিক বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব। সাইবার জগতে জঙ্গিদের কার্যক্রম রোধে সার্বক্ষণিক সাইবার নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার দায়িত্বকালীন মাদকের বিস্তাররোধে মাদকের কারবারিদেরকে গ্রেফতারের পাশাপাশি মাদকের উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাদকের রুট ও চ্যানেলসমূহ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করি। নিত্যনতুন কৌশলে মাদক চোরাচালানের কৌশল চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের সকল অপকৌশলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমার দায়িত্বকালীন প্রায় ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব এবং জব্দ করা হয় ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক। আটক করা হয় নতুন মাদক ক্রিস্টাল আইসের সর্ববৃহৎ (১২ কেজি) চালান ও এযাবতকালে বিদেশি মদের সবচেয়ে বড় (প্রায় ৩৭ হাজার বোতল) চালান। মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে মাদক নির্মূলের ব্যবস্থা গ্রহণ করে র‌্যাব।’

তিনি বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর বা ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড বা অপরাধের ক্ষেত্রেও দ্রুততম সময়ে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে দায়িত্বকালীন সময়ে আমি গুরুত্বারোপ করি। বিগত বছরগুলোতে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যাকাণ্ড, রাজধানীর উত্তরার সেফটিক ট্যাংক হতে গলিত লাশ উদ্ধার ও ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতারসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধ ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে মানুষের মনে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব।’

‘সাম্প্রতিক সময়ে, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল, রমনা বটমূলে বোমা হামলার মৃত্যুদন্ড ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মুফতি শফিকুর রহমান, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজিবি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আব্দুল হাইসহ বিভিন্ন নৃশংস মামলার আসামিদের গ্রেফতারের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণের বাংলাদেশ সফরকালীন সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। চিহ্নিত সেই চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত প্রায় অর্ধশতাধিক অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে র‌্যাব ফোর্সেস।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এলিট ফোর্সেস র‌্যাবকে সময়োপযোগী আধুনিক বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষে দায়িত্বকালীন সময়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সুবিধার আওতায় এনে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। অতি দ্রুত অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করে বিগত বছরে উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন করার মাধ্যমে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধের রহস্য দ্রুত সময়ে উদঘাটনপূর্বক অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ক্রাইম সিন অ্যানালাইসিস দক্ষতা বৃদ্ধিতে র‌্যাব ফরেনসিক টিমের আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও সাইবার জগতে অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়াতে সার্বক্ষণিক র‌্যাবের সাইবার নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন