বিজ্ঞাপন

চোখের জলে সাঙ্গ হলো দুর্গোৎসব, কৈলাসে ফিরলেন মা উমা

October 5, 2022 | 10:06 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অম্বিকা, রুদ্রাণী, উমা, ভবানী, কন্যাকুমারী, কাত্যায়নী, জয়দুর্গা— নানা নামে সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মাঝে আসেন তিনি। মণ্ডপে মণ্ডপে শিল্পীর তুলিতে রূপের প্রার্থক্য, কারুকার্য বিভিন্ন রকমের হলেও বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি অতি একান্ত আপনজন, তিনিই ঘরের মেয়ে উমা।

বিজ্ঞাপন

বিপত্তারিণী দেবী ষষ্ঠীতে প্রাণ সঞ্চারণার মধ্য দিয়ে ভক্তদের মাঝে এসে অধিষ্ঠিত হন। এবার হাতিতে চড়ে ভক্তদের কাছে মর্ত্যে আসেন। এরপর নবমীর নিশি শেষেই দশমীর বিষাদের সুর জাগে ভক্তদের মনে। বিজয়া দশমীতে নানা আয়োজনে ভক্তরা বিদায় দিয়ে থাকে মা উমাকে। আর ভক্তদের দুঃখ দূর করে এবার মা উমা বিদায় নিচ্ছেন নৌকায় চড়ে। সিঁদুর খেলা শেষে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ভক্তরা কৈলাশের পথে এগিয়ে দেন বিপদনাশিনী মা দুর্গাকে। আর এর মধ্যেই সাঙ্গ হতে যাচ্ছে সনাতনী ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বা পার্বণ বলে পরিচিত শারদীয় দুর্গোৎসব।

বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলখেতসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নানা আয়োজনে ভক্তরা অশ্রুসিক্ত দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক ছেড়ে ফিরছেন কৈলাসে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিগত দুই বছর দুর্গাপূজার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। পূজার আরতিসহ সিঁদুর খেলা বিসর্জনের শোভাযাত্রা করা হয় সীমিত আকারে।

বিজ্ঞাপন

তবে এবার শোভাযাত্রা ও সিঁদুর খেলা দুটোই হচ্ছে বলে জানান মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল।

তিনি বলেন, ‘আজ (বুধবার, ৫ অক্টোবর) সকালে দশমীর পূজা শেষে বিসর্জনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এরপর আমাদের মা বোনেরা সিঁদুর খেলেন। তারপর দুপুর তিনটার দিকে বিভিন্ন স্থানে বিসর্জনের শোভাযাত্রা শুরু হয় প্রতিটা মণ্ডপ থেকে। এরপরে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে তাকে বিদায় জানানো হয়। বিসর্জন শেষে শান্তিজল নিয়ে ঘরে ফিরবেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর উত্তরা ১১ নং সেক্টর মাঠে সকাল ১০টায় যথারীতি দশমীবিহিত পূজা শুরু হয়। এরপরেই শুরু হয় সিঁদুর খেলা। যা বিকাল পর্যন্ত অশ্রুসিক্ত দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আয়োজিত দুর্গাপূজায় দুপুরের দিকে শুরু হয় সিঁদুর খেলা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত দুইবছর কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে পূজায় অনেক কিছুতেই সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু এবার ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এবার উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবারের দুর্গোৎসব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছি। শেষ সময়ে মণ্ডপগুলোতে বিদায়ের সুর লক্ষ করা যাচ্ছে। বিকেল ৩ টা থেকে বিসর্জন শুরু করে মাকে এবারের মতো বিদায় জানানো হবে।’

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে আজ (৫ অক্টোবর)। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা এই মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরছেন।

বিজ্ঞাপন

বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ কমিটির সভাপতি শ্রীবাস রায় বলেন, ‘আমরা বিকেল ৪টার দিকে বালু নদীতে যাই। এরপর সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে শান্তিজল নিয়ে এলাকায় ফিরে আসি।’

এদিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত পূজা মণ্ডপ থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় তুরাগ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

বিজয়া দশমীর দিনটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আবেগ ও মন খারাপ করা এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কারণ, দশমী মানেই দুর্গা মায়ের ফিরে যাওয়া। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটি বছর। আর এরই প্রভাব দেখা যায় বিসর্জন শেষে ফিরে আসা ভক্তদের মাঝে।

সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, এবার দেবীদুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) এসেছেন। পঞ্জিকামতে, দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ, সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান ও সমৃদ্ধির প্রতীক। আর আজ বিজয়া দশমীতে দেবী কৈলাসের উদ্দেশ্যে মর্ত্য ছাড়বেন নৌকায় চড়ে। নৌকায় চড়ে মর্ত্য ছাড়লে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হবে। পৃথিবী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতি বর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা দেবে।

এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। রাজধানীতে ২৪২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সর্বজনীন পূজামণ্ডপকে বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। ঢাকার বৃহত্তর মন্দির হলো সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, রমনা কালীমন্দির, উত্তরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পূজামণ্ডপ।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন