বিজ্ঞাপন

সরে দাঁড়ালেন ‘অভিমানি’ নিখিল, থাকবেন ‘দাদা’র সঙ্গেই

November 30, 2023 | 10:55 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার হয়তো পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তাদের সেই পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারই। তার বিপরীতে যাকে ঘিরে পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, সেই নিখিল কুমার চাকমাও দীপংকর তালুকদারের মতোই জাতীয় সংসদের ২৯৯ নম্বর রাঙ্গামাটি আসনে প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে দলের হাইকমান্ডের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নিখিল নির্বাচন করছেন না। অনেকটা অভিমান নিয়েই আর মনোনয়নের ফরম জমা না দিয়ে নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নিখিলের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো পার্বত্য রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ‘নৌকার মাঝি’ পরিবর্তন করবে। সেই প্রত্যাশা থেকেই দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন অনেকেই। কিন্তু দলের হাইকমান্ড তথা মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী পরিবর্তন না করায় হতাশ হয়েছেন নিখিলের অনুসারীরা। দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এবার কেন্দ্র ‘শিথিল’ থাকলেও অভিমান করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন না নিখিল। তবে রাজনৈতিক ‘প্রতিযোগিতা’ থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের নির্বাচনে গণসংযোগে ‘দেখা যাবে’ নিখিল কুমার চাকমাকেও, নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন সেটিই।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৯৯১ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে টানা ছয় বার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য দীপংকর তালুকদার। ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে চারটিতেই বিজয়ী হয়েছেন দীপংকর। বাকি দুটি নির্বাচনের মধ্যে একটিতে আঞ্চলিক দল এবং আরেকটিতে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরেছেন তিনি। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে সপ্তমবারের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন দীপংকর তালুকদার, রাঙ্গামাটি জেলায় যিনি এক নামে ‘দাদা’ হিসেবেই পরিচিত।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দীপংকর তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এখন টানা কয়েকধাপে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির। হয়েছেন কেন্দ্রের সদস্যও। উপজাতীয় শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এখন রয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে।

অন্যদিকে নিখিল কুমার চাকমা ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্যও। পরে দুই মেয়াদে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এক ধাপে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শেষে রাজনীতিতে অনেকটা ‘প্রভাব হারিয়ে ফেলেন’ নিখিল কুমার। সর্বশেষ রাজনৈতিক নেতা হয়েও সচিব পদমর্যাদায় হয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান।

বিজ্ঞাপন

এরপর আবারও রাজনীতির পুরনো হালে জোর দেন নিখিল কুমার চাকমা। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতির পদ নিয়ে ‘কাড়াকাড়ি’র জের ধরে দীপংকর তালুকদার ও নিখিল কুমার চাকমার রাজনৈতিক বৈরিতা প্রকাশ্যে আসে।

নিখিলের অনুসারীরা বলছেন, জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজের ‘একচ্ছত্র প্রভাব’ ধরে রাখা ও নিখিল কুমার চাকমাকে প্রতিপক্ষ ভেবেই দূরে সরিয়ে দেন দীপংকর তালুকদার। অথচ এক সময় নিখিল কুমারই ছিলেন দীপংকর তালুকদারের আস্থাভাজন। অনেককটা ‘গুরু-শিষ্যের’র সম্পর্ক এখন রূপ নিয়েছে ‘দা-কুমড়ো’ সম্পর্কে। উপজেলার রাজনীতি থেকে ‘সফলতার সঙ্গে’ উঠে-আসা নিখিল কুমার দীপংকরের বিরাগভাজন হয়ে জেলার রাজনীতিতে হয়ে পড়েছেন অনেকটা ‘বেকায়দায়’।

এদিকে গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য দীপংকর তালুকদার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’ আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘একসময় রাঙ্গামাটিতে নির্বাচন করার জন্য কোনো প্রার্থী ছিল না, কোনো সাহসী মানুষ ছিলেন না। আমাদের বাইরে থেকে আমদানি করে নির্বাচন করাতে হয়েছে।’

দীপংকর বলেন, ‘১৯৯১ সালের আগে রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগ যাদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল তাদের সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও চিনতেন না। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর রাজস্থলীতে গিয়ে চা খাওয়ানোর মতো কাউকে পাইনি। বাঘাইছড়িতে যাওয়ার পর আমার আত্মীয়-স্বজনরাও সালাম নিতে চাননি, অনেকেই ভয়ে। এবার দল থেকে ১০-১১ মনোনয়ন চাইছেন এটা অত্যন্ত আনন্দের।’

বিজ্ঞাপন

নিখিল কুমার চাকমা অবশ্য এসব বক্তব্য নিয়ে কিছুই ভাবছেন না। দলের প্রতি আনুগত্যবোধ থেকেই প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘দাদা’ দীপংকর তালুকদারের পক্ষেই নির্বাচনের মাঠে থাকবেন।

নিখিল কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে আমি নৌকার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছি। কখনো নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিইনি, সমর্থন করিনি। এবার দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও বিবেকবোধ থেকে আমি সেই সুযোগটা নিচ্ছি না। নৌকার বিপক্ষে, শেখ হাসিনার প্রার্থীর বিপক্ষে আমি দাঁড়াতে পারব না।’

নিখিল বলেন, ‘আমি রাঙ্গামাটি জেলা পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলাম। সচিব পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। এসব কিছু দলই আমাকে দিয়েছে।’

দল ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিখিল কুমার বলেন, ‘দল আমাকে যা দিয়েছে সেই বিবেকবোধ থেকে আমি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সুযোগ নিইনি। আগের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের পক্ষে, নৌকার পক্ষে কাজ করব। নির্বাচনের গণসংযোগেও থাকব।’

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন