বিজ্ঞাপন

আড়াই বছরে দেশে রিজার্ভ কমে অর্ধেক

April 24, 2024 | 3:45 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সর্বশেষ আড়াই বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ এপ্রিল দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৪.০৭ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব না।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশের রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা থাকা জরুরি। রিজার্ভের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারকদের মাঝে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়েও রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি বিশেষ দল। দলটি আগামী ৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফের প্রতিনিধি দল ব্যাংক সংস্কারের নামে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে। এছাড়া রিজার্ভ কেন বাড়ছে না, কেন লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না এবং সামনে কীভাবে রিজার্ভ বৃদ্ধি করা যায়, এর বিশদ পরিকল্পনা চাইতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

আইএমএফের প্রতিনিধি দল ব্যাংক সংস্কারের বিষয়ে জানার পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতে গুরুত্ব দেবে বলেও জানান তিনি।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘সরকার আইএমএফের পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু তেল-গ্যাস আমদানির খরচ মেটাতেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ আর বাড়ছে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘দেশে যথেষ্ট রিজার্ভ রয়েছে। রিজার্ভ নিয়ে কোনো দুঃশ্চিন্তা নেই। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অতিরিক্ত রিজার্ভ আমাদের আছে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ এপ্রিল দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাবে তা ১৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার। এটি অবশ্য প্রকৃত রিজার্ভ নয়। আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবাদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫.৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪.০৭ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত তিন মাসে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ) গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫.৮৭ বিলিয়ন ডলার, ৫.২০ বিলিয়ন ও ৫.১০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট আট মাসে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ৪৪.৪৮ বিলিয়ন ডলার। গড় হিসাবে মাসে তা ৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ফলে এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৪.৭ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কষ্টকর। কারণ গড়ে প্রতি মাসে ৪.৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে তিনি মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো দুরূহ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-২৩ থেকে মার্চ-২৪) বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। একইসময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে ১ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। আরও ২.৭ বিলিয়ন ডলার সোয়াপ পদ্ধতির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বন্ধক রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিজ্ঞাপন

২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং তার আগের অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/জিএস/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন