বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: নেদারল্যান্ডস

November 8, 2022 | 11:32 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

আশা করা যায় ‘গ্রুপ-এ’র শীর্ষ র‍্যাংকিংধারী (ফিফা র‍্যাংকিং: ৮) নেদারল্যান্ডস‌ এবারের বিশ্বকাপে বেশ উজ্জীবিত হয়ে অংশগ্রহণ করবে, কারণ পরের বছর তারা নিজেদের ঘরের মাঠেই ইউরোপিয়ান নেশনস লিগের ফাইনাল খেলবে। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা ফুটবল বিশ্বকাপের পর ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত পারফরম করে নেদারল্যান্ডস। ২০১০ সালে স্পেনের কাছে হেরে রানার্সআপ আর ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে সেমিফাইনালে বিদায় নেওয়ার পর ব্রাজিলকে হারিয়ে তৃতীয় হয়ে শেষ করেছিল ডাচরা। তবে বিপত্তি ঘটে ২০১৮ বিশ্বকাপের আগেই। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বই উৎরাতে পারেনি তারা। তবে চার বছর নিজেদের ফিরে পেয়েছে। আর আবারও বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরতে প্রস্তুত নেদারল্যান্ডস। দুর্দান্ত ফর্ম দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। এবার মঞ্চে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত লুইস ভ্যান গালের অধীনে।

বিজ্ঞাপন

দলের কোচ লুইস ভ্যান গাল—

আয়াক্স, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলোতে নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করেছেন ৭১ বছর বয়সী লুইস ভ্যান গাল। অচেনা নন তিনি কারো কাছেই। এর আগে দুই দফায় নেদারল্যান্ডসের কোচের দায়িত্ব পালন করার পর তৃতীয়বারের মতো তারই কাঁধে তুলে দেওয়া হয় ডাচদের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার ভার।

কোচ হিসেবে ডাচ জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি জয় পাবার সুযোগ রয়েছে তার এই বিশ্বকাপে। এই মুহূর্তে তিনি এবং ডিক অ্যাডভোকেট‌ সমান ৩৭টি ম্যাচে জয় পেয়েছেন, যদিও ডিক অ্যাডভোকেট‌ ৪টি বেশি ম্যাচে কোচ ছিলেন। ‌ এই বছরের শুরু দিকে জানান তিনি ২০২০ সাল থেকে প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগছেন। তাই তার দলের শিষ্যরা নিশ্চয়ই চাইবেন তিনি যেন মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে পারেন, আর এই লক্ষ্যে খেলোয়াড়রা মাঠে প্রাণ বাজি রেখেই লড়বেন।

বিজ্ঞাপন

দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা—

দলের প্রতিটি পজিশনেই ভালো খেলোয়াড় রয়েছে, তাই বলা যায়‌ তারা সব দিক থেকেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল। তবে এই মৌসুমে তারা যে অসুবিধাতে ভুগছে তা হলো, তাদের প্রধান সৃজনশীল খেলোয়াড় ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং এবং মেমফিস ডিপাই ইনজুরির ঝুঁকিতে রয়েছেন। ভ্যান গাল সাধারণত এমন খেলোয়াড়দের বেছে নিতে পছন্দ করেন যারা পুরোপুরি ম্যাচ ফিট, কিন্তু‌ এবার এই জুটির জন্য ব্যতিক্রম‌ হতে পারে। অন্যদিকে ৪৬৯টি ক্লাব ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডুমও ইনজুরির কারণে সাইড লাইনে চলে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে স্কোয়াড ততটা গভীর নয়, ফলে তারা মূল একাদশের সমতুল্য বা কাছাকাছি ভালো মানের বদলি খেলোয়াড়ের সমস্যায় পড়তে পারে।

আগে দলের সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার বা স্ট্রাইকাররা জয়ের ভিত গড়ে দিতেন কিন্তু বর্তমান দলটিতে ডিফেন্ডাররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। অভিজ্ঞ ডেইলি ব্লাইন্ড এবং ভার্জিল ভ্যান ডাইকের পাশাপাশি আছেন তরুণ এবং প্রতিশ্রুতিশীল ম্যাথিজ ডি লিট।

তারকা প্লেয়ার—

দলের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে নিঃসন্দেহে ভার্জিল ভ্যান ডাইক এগিয়ে আছেন কারণ তিনি দলের ক্যাপ্টেন এবং গত অক্টোবর মাসে ম্যানচেস্টার সিটির এরলিং হ্যাল্যান্ডকে যেভাবে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন, তাতে তিনি শুধু দলেরই নয় এই মুহূর্তে বিশ্বের একজন সেরা ডিফেন্ডার। ভ্যান ডাইক একজন অনুকরণীয় অধিনায়ক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী খেলোয়াড়। জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল করার দক্ষতাও রয়েছে তার।

বিজ্ঞাপন

তরুণ তারকা—

২৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গার কোডি গাকপোর জন্য এই বিশ্বকাপ একটি দুর্দান্ত সুযোগ। তিনি ২০২১-২২ মৌসুমে বর্ষসেরা ডাচ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। বা পায়ের এই উইঙ্গার সাধারণত তার ডান দিকে চেপে খেলতে অভ্যস্ত ফলে তিনি অনেকটাই আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যান। ‌

চেনা তারকা—

২৬ বছরের ডেনজেল ডামফ্রিস মাঠের বাইরে যথেষ্ট ভদ্র ও শান্তশিষ্ট হিসেবে পরিচিত। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা হওয়ার কারণে তিনি সেন্টার-ব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন। তবে বর্তমান দলে তিনি রাইট ব্যাক এবং রাইট উইং ব্যাক হিসেবে দলের আক্রমণে যোগ দেন। ২০২১ সালে ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার পরে গোল করা এবং সহায়তার জন্য ইতালিয়ান লীগের সেরা ১০ জনের একজন হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সেট পিস এবং ক্রস থেকে গোল করায় সিদ্ধহস্ত‌, আর এভাবেই তিনি ইউরো-২০২০ এ ২টি গোল করেছেন।

কেউ জেনে অবাক হতে পারেন ২৮ বছর বয়সের মেমফিস ডিপাই নেদারল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড থেকে আর মাত্র ৯ গোল দূরে আছেন। তিনি এ পর্যন্ত ৮১ ম্যাচে ৪২টি গোল করেছেন। ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট মেমফিস ২০১৪-১৫ মৌসুমে ইউরোপের সেরা সেট পিস টেকার ছিলেন। তবে নিন্দুকেরা তাকে কিছুটা অহংকারী এবং খামখেয়ালি বলে বিবেচনা করেন। ফুটবলের বাইরে তাকে চেনা যায় অসংখ্য ট্যাটু ব্যবহারকারী হিসেবে, যার কিনা ঠোঁটের ভেতরের দিকে একটি ট্যাটুও রয়েছে।

খেলার ফর্মেশন—

যদিও তাদের অভিজ্ঞ কোচ লুইস ভ্যান গাল একসময় ৪-৩-৩ পদ্ধতির একজন বড় অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ডাচ দলকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় তিনি ব্যবহার করেছিলেন ৫-৩-২ পদ্ধতি। যেই পদ্ধতির আবার ঘোর সমালোচনাকারী হচ্ছেন তার নিজ দলের ক্যাপ্টেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। তা সত্ত্বেও এই ৫-৩-২ পদ্ধতি ব্যবহার করেই তিনি নেদারল্যান্ডসকে ইউরোপিয়ান নেশনস লীগের ফাইনালে নিয়ে গিয়েছেন। ‌‌‌‌‌

৫-৩-২ পদ্ধতির সমর্থনে কোচ বলেছেন, “আপনি এটি দিয়ে আক্রমণ করতে পারেন এবং আপনি এটি দিয়ে রক্ষা করতে পারেন। আপনি প্রতিপক্ষকে সর্বত্র চাপে রাখতে পারেন এবং আপনি যদি এটি ভাল খেলেন তবে প্রতিপক্ষের পাল্টা আক্রমণে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি কম থাকে কারণ আপনার কাছে তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রয়েছে।” এই পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হল প্রয়োজন মাফিক একে ৩-৪-৩ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যাবে এবং মাঠের সর্বত্র ত্রিভুজ আকারে খেলোয়াড়দের সাজানো যাবে।

বিশ্বকাপের সম্ভাব্য একাদশ—

গোলরক্ষক: জ্যাসপার সিলেসেন (এনইসি নিযমেগেন)

রক্ষণভাগ: স্টেফান ডি ভ্রিয় (ইন্টার মিলান), ভার্জিল ভ্যান ডাইক (লিভারপুল), ডেলি ব্লিন্ড (আয়াক্স)

উইং ব্যাক: ডেনজেল ডামফ্রিস (ইন্টার মিলান), নাথান একে (ম্যানচেস্টার সিটি)

মিডফিল্ডার: ফ্রেঙ্কি ডি জং (বার্সেলোনা), ডেভি ক্লাসেন (আয়াক্স), কোডি গাকপো (পিএসভি আইন্দহোভেন)

ফরোয়ার্ড: মেমফিস দেপাই‌ (বার্সেলোনা), স্টিভেন বার্গউন (আয়াক্স)

আমার দেখা সেরা ২৩ ফুটবলার (বর্তমান ও নতুন খেলোয়াড় সহ)—

সবশেষে থাকবে আমার দেখা নেদারল্যান্ডসের সেরা-২৩ ফুটবলার যাদের খেলা আমি এ যাবত দেখেছি।

গোলরক্ষক:

এডউইন ভ্যান ডার সার (ম্যাচ: ১৩০)। মার্টেন স্টেকেলেনবার্গ (ম্যাচ: ৬৩)

রক্ষণভাগ:

রাইট উইং ব্যাক:

মাইকেল রেইজিগার (ম্যাচ: ৭২, গোল: ১)

জন হেইটিঙ্গা (ম্যাচ: ৮৭, গোল: ৭)

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার:

ফ্রাঙ্ক ডি বোয়ের (ম্যাচ: ১১২১ গোল: ১৩)

জাপ স্ট্যাম (ম্যাচ: ৬৭, গোল: ৩)

ভার্জিল ভ্যান ডাইক (ম্যাচ: ৪৯, গোল: ৬)। এই লিস্টের মধ্যে উনি একমাত্র বর্তমান জাতীয় দলে খেলছেন।

লেফট উইং ব্যাক:

রোনাল্ড কোম্যান (ম্যাচ: ৭৮, গোল: ১৪)। একজন ডিফেন্ডার হিসেবে তিনি ক্লাব পর্যায়ের ১৯২ টি গোল করেছেন।

জিওভানি ভ্যান ব্রঙ্কহর্স্ট (ম্যাচ: ১০৬, গোল: ৬)

মধ্যমাঠ:

রক্ষণাত্মক মিডফিল্ড:

ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড (ম্যাচ: ৭৩, গোল: ১০)

এডগার ডেভিডস (ম্যাচ: ৭৪ & গোল: ৬)

আক্রমণাত্মক মিডফিল্ড:

রুড গুলিত (ম্যাচ: ৬৬, গোল: ১৭)। তিনি ডিফেন্স,‌‌ মিডফিল্ড এবং স্ট্রাইকার সব পজিশনেই খেলতে পারতেন।

ক্লারেন্স সিডর্ফ (ম্যাচ: ৮৭, গোল: ১১)

ফিলিপ কোকু (ম্যাচ: ১০১, গোল: ১০)

ওয়েসলি স্নেইডার (ম্যাচ: ১৩৪, গোল: ৩১)

রাফায়েল ভ্যান ডার ভার্ট (ম্যাচ: ১০৯, গোল: ২৫)

মার্ক ওভারমার্স (ম্যাচ: ৮৬, গোল: ১৭)। ‌

ফরোয়ার্ড:

মার্কো ভ্যান বাস্তেন (ম্যাচ: ৫৮, গোল: ২৪)। ইনজুরির কারণে তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে থেকে বিদায় নেন।

ডেনিস বার্গক্যাম্প (ম্যাচ: ৭৯, গোল: ৩৭)

রুড ভ্যান নিস্টলরয় (ম্যাচ: ৭০, গোল: ৩৫)

প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট (ম্যাচ: ৭৯, গোল: ৪০)।‌‌ তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে জাতীয় দলকে বিদায় জানান।

রবিন ভ্যান পার্সি (ম্যাচ: ১০২ & গোল: ৫০)

আরয়েন রবেন (ম্যাচ: ৯৬, গোল: ৩৭)।

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: কাতার

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: সেনেগাল

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: ইকুয়েডর

সারাবাংলা/এসআইটি/এসএস

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন