বিজ্ঞাপন

আগুন লাগা ভবনে ১ বছর আগেও লাখ টাকা জরিমানা করা হয়

August 15, 2022 | 10:23 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চকবাজারের পুড়ে যাওয়া বরিশাল হোটেলের ওই ভবনটিতে এক বছর আগেও পুলিশের সহায়তা অভিযান চালিয়েছিল পরিবেশ অধিদফর। ভবনটির অবৈধভাবে প্লাস্টিক কারখানা গড়ে ওঠায় ওই সময় এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ আগস্ট) আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে এসে তিনি এ তথ্য জানান। জাফর হোসেন বলেন, ‘এক বছরের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যে কারখানা ছিল তা বন্ধের পরিবর্তে স্বাভাবিকভাবে চলেছে। আর সেখানেই আজ আগুনে পুড়েছে সবকিছু।’

ডিসি বলেন, ‘শুধু এই কারখানায় নয়, আশেপাশের সবগুলো ভবনেই এরকম অবৈধ কারখানা রয়েছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সারাবাংলাকে বলেন, যে ভবনটিতে বরিশাল হোটেল ভাড়া দেওয়া ছিল সেই ভবনের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা। একই ভবনে জুতার কারখানা, পলিথিনের কারখানা ও প্লাস্টিক খেলনার কারখানা ছিল। একেক ফ্লোর একেকজন ভাড়া নিয়ে কারখানাগুলো চালিয়ে আসছিল। হোটেলের মালিক ছিলেন রানা নামে এক যুবলীগ নেতা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সোমবার সকালেও ওই হোটেলে নাস্তা করে গেছেন অনেকে। সারারাত খোলা থাকে হোটেলটি। রাতভর যারা ডিউটি করেছে তারা হোটেলের ভেতরে ওপরে ঘুমিয়েছিল। আর একদল ডিউটি করছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করে বিস্ফোরণ ঘটায় ডিউটিরতরা বের হয়ে গেলেও যারা ঘুমিয়ে ছিলেন তারা আর বেরুতে পারেননি।

এর পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হোটেলের সেই ঘুমানোর জায়গা থেকে একে একে ছয় জনের মরদেহ বের করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। মরদেহগুলো ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ ব্যাগে ভরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড) মর্গে নেওয়া হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে চকবাজারের কামালবাগ এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন:

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সরকারি জমি লিজ নিয়ে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। যে হোটেল থেকে আগুন লেগেছে, সেখানে আগে গ্যাসের লাইন ছিল। বিল বকেয়া থাকায় হোটেলটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তখন থেকে তারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে।’

ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ‘আনুমানিক ১২টার দিকে বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি ওই হোটেলে আগুন জ্বলছে। এরপর সেখান থেকে আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’

বিজ্ঞাপন

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মরদেহগুলো চেনার উপায় নেই। ময়নাতদন্তের জন্য সেগুলো মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। যেসব স্বজন মরদেহের দাবি করছে তাদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষা শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদরের জোন-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনের শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, তাদের চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। আগুনে পুড়ে ওই পাঁচ মরদেহের হাড় বেড়িয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আরেকজনের চেহারা দেখলে কিছুটা বোঝা যায়। মরদেহগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের শুরুর দিকে হয়তো তারা মারা গেছেন।’

এদিকে, নিহত ছয় জনের মধ্যে চার জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মো. শরিফ (১৫), মো. বিল্লাল (৩৫), মো. স্বপন (২২), মো. ওসমান (২৫)। অপর দুজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের যেসব কর্মী ওপর থেকে মরদেহগুলো ব্যাগে ভরে নিচে নামিয়েছেন তাদের একজন বলেন, ‘তাদের কেউ কর্নারে বসেছিলেন, কেউ নামাজরত অবস্থায় ছিলেন, কেউ লম্বা হয়েছিলেন। যে যেভাবেই থাকুক না কেন তাদের শরীরের সবকিছু পুড়ে হাড় বের হয়ে গেছে। কারও কারও হাড় জ্বলছিল। পাশে একটা সিঁড়ি থাকলেও তারা বের হতে পারেননি।’

ছবি: সুমিত আহমেদ, ফটো করেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন