বিজ্ঞাপন

লক্ষ্যের সঙ্গে বাজেটের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়: সিপিডি

June 9, 2022 | 10:25 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২০-২৩ অর্থবছরের বাজেটে যেসব লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা পূরণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। একইসঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগকে অনৈতিক বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি এমন মন্তব্য করেছে। সংগঠনটির পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেটজুড়ে মূল্যস্ফীতি শব্দটি বহুবার এসেছে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়েছে, মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত যে পদক্ষেগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা কর উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের কথা সম্প্রতি বলেছিলাম। অল্প কিছু পণ্যের ওপর কর উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। এর বাইরেও নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য মানুষকে ভোগ করতে হয়। বাজেটে দেখা গেল, গম ছাড়া আর কোনো পণ্য ছাড় পাচ্ছে না। আমরা বলেছিলাম চাল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের ওপর কর ছাড় দিতে।’

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে নূন্যতম আয়করের সীমা আমরা সাড়ে তিন লাখ টাকা করতে বলেছিলাম। কিন্তু সেই সীমা তিন লাখই রয়ে গেছে। বেতনের বাইরে যেমন সুযোগ-সুবিধা থাকে, যাতায়াত বা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এটা তো একেবারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন,‘জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকি চালিয়ে যেতে হবে। ভর্তুকির হিসাব আমরা পুরোপুরি পাইনি। কৃষিতে ভর্তুকি ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করার একটি হিসাব দেখছি। গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দাম ক্রমান্বয়ে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে এগুলোর দাম বাড়ানো হবে। কিন্তু এই সময়ে দাম বাড়ালে জনগণের ওপর চাপ পড়বে।’

বিজ্ঞাপন

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। সিপিডি মনে করছে, এই বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা গতবারের রিজার্ভ বাজেটের বরাদ্দের চেয়ে কম, প্রকৃত বাজেটের চেয়ে আরও অনেক বেশি কম। সামাজিক সুরক্ষা খাতে জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সেটি ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। পরিমাণগত ও আনুপাতিক পরিমাণেও কমানো হয়েছে। খোলা বাজারে বিক্রির পরিমাণ কমানো হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার অনেকগুলো প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এটি একেবারেই কাম্য নয়।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, কর আহরণের ক্ষেত্রে নতুন তেমন কোনো উদ্যোগ দেখিনি। বরং আমরা দেখলাম, নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়ে উচ্চ আয়ের মানুষকে বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে সিপিডি বলছে, বিদেশ থেকে টাকা আনার ব্যাপারে বিভিন্ন কর ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। এটি একেবারেই অনৈতিক। এটি বাস্তবায়ন হওয়ার মতো না, বাস্তবায়ন হয়ও না। এই ধরনের পদক্ষেপ অনৈতিক। প্রথমে আমরা সুযোগ করে দেবো মানুষকে অনৈতিক পথে আয় করার কিংবা সম্পদ অর্জন করার, পরে সেগুলোকে বিভিন্ন কর ছাড়ের মাধ্যমে দেশে আসার সুযোগ দেওয়া সামাজিক ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

সিপিডির ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমদানি ব্যয় কমাতে আমদানির বিকল্প শিল্পকে প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। সেটি কিন্তু ভালো উদ্যোগ। এটি হয়তো কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে আনার কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে আমরা পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা বা পদক্ষেপ দেখিনি।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রচলন করার কথা বলা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। কিন্তু এই এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন বা সুস্পষ্ট পদক্ষেপ তুলে ধরেননি বলে সমালোচনা করছে সিপিডি।

সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অসম্পূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে যদি বলি— যে লক্ষ্যে এই বাজেটটি তৈরি করা হয়েছে, সেই লক্ষ্যগুলো হয়তো ঠিক। কিন্তু সেই লক্ষ্যগুলো পূরণে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো অপরিপূর্ণ, নীতি কৌশলের পথনির্দেশনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেগুলো অসম্পূর্ণ এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন